রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ০১:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
দেশের মানুষ এখনো আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে : নাহিদ ইসলাম চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে রফতানি কার্যক্রমে যুগান্তকারি পদক্ষেপ লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যারা বিএনপিকে মাইনাস করতে যাবে তারা রাজনীতি থেকেই হারিয়ে যাবে: হাবিব সাড়ে ৪ মাস পর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি চলাচল শুরু ঢাকায় তিন দিনব্যাপী মোটর শো শুরু অনুমতি ছাড়া হজ পালন না করার অনুরোধ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পাবনা শহরে ইছামতী নদীর খনন শুরু বার্সার বিপক্ষে ফিরতি লেগে মার্টিনেজের খেলা নিয়ে সংশয়

‘আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো’-স্ত্রীকে বলছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫
'আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো'-স্ত্রীকে বলছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু
শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু। ছবি : বাসস

‘তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো।’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি বের হওয়ার আগে স্ত্রী মৌসুমীকে এ কথাগুলো বলে গিয়েছিলেন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু।

রঞ্জুর স্ত্রী জানান, ‘ঘটনার আগের দিন আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি আন্দোলনে যাচ্ছো, কিন্তু পুলিশ যেভাবে গুলি করছে—সাধারণ মানুষসহ অনেককে গুলি করে মারছে—তুমি যেও না।

জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘গুলি করা বন্ধ হয়েছে। আজকে দেশ স্বাধীন করব, না হয় জীবন দেব।’ এই বলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেদিনই তিনি জীবন দেন। আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

যাওয়ার সময় তিনি স্ত্রীকে বলে যান, ‘তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো।’

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার নিজ বাসায় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শহীদের স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (৩২)।

শহীদ সোহানুর রহমান ছিলেন সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তিনি ভালোই ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নম্র-ভদ্র ছিলেন, এবং নিজের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, সাহায্য করতেন।

তার স্ত্রী ও দুই বছরের কন্যা সুমাইয়া খান রোজা বর্তমানে জীবনের কঠিন সময় পার করছেন। রঞ্জুর বাবা মো. মাজেদ খান ও মা শামসুন নাহার বহু আগেই মারা গেছেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকায় একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালাতেম। পরে সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেটে ‘খান ডেন্টাল’ নামে আরেকটি ক্লিনিক চালু করেন, যেখানে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতেন।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে সোহানুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মিছিলে যোগ দেন। ওইদিন সিরাজগঞ্জ এস.এস. রোডে মিছিল শুরু হয়। ক্রমেই জনসমাগম বাড়তে থাকে।

সকাল ১১টার দিকে মাহবুব শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ছোড়া একটি গুলি শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জুর ডান চোখে লাগে এবং মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। জনতা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ রঞ্জু পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৪ আগস্ট তিনি শহীদ হলেও ৬ আগস্ট সকালেই জানাজা শেষে শহরের কান্দাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত করা হয়।

দুই বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়া এখনো বুঝতে পারে না, তার বাবা আর ফিরবেন না। প্রতিদিন মা মৌসুমীর কাছে সে জানতে চায়—’বাবা কই? বাবা কবে আসবে?’ মোবাইলে বাবার ছবি দেখিয়ে মৌসুমী তাকে সান্ত্বনা দেন। শিশুটির চোখে যেন বাবাকে দেখার এক অদম্য ক্ষুধা। সারা দিন খুঁজে ফেরে তার প্রিয় বাবার মুখ।

শহীদ রঞ্জুর স্ত্রী বলেন, ‘উনার শেষ কথাগুলো বারবার মনে পড়ে। মিছিলে যাওয়ার আগে তিনি মেয়েকে দেখে রাখতে বলেছিলেন। আজ নয় মাস হয়ে গেছে—উনি নেই। আমি যেন জীবন্ত লাশ। সবচেয়ে কষ্ট হয়, যখন মেয়েটা ওর বাবার শার্ট বুকে জড়িয়ে কান্না করে, আর আমাকে জিজ্ঞেস করে—‘আব্বু কবে আসবে?’ তখন আমার হৃদয় ভেঙে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে বলব, ওর আব্বু আর কোনো দিন আসবে না। ওর বাবাকে সে আর কখনো দেখতে পাবে না, ডাকতে পারবে না। বাইরে থেকে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরবে না কেউ।’

মৌসুমী জানান, ‘প্রতিদিন মেয়েকে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে খাওয়াতে হয়। বাবা ফিরবে—এই আশা দিয়ে তাকে ঘুম পাড়াতে হয়। এসব সান্ত্বনার আড়ালে নিজের বুকের কষ্ট চেপে রাখি।’

তিনি আরও জানান, ‘রঞ্জুর লাশ বাড়িতে আনার পর প্রতিবেশীরা খাটিয়ায় জাতীয় পতাকা বিছিয়ে দেন। রোজা ওই অবস্থায় বাবাকে দেখে। তখন থেকেই সে জানতে চায়—বাবা কোথায়? আমার স্বামী তো কোনো দোষ করেনি, তাহলে তাকে কেন মারল? এর দায় কে নেবে?’

প্রতিবেশী বেবী খাতুন বলেন, ‘রঞ্জু ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাকে হারিয়ে পরিবারটি একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। শুনেছি, মৌসুমী এইচএসসি পাশ করেছেন। যদি তিনি একটি চাকরি পান, তাহলে অন্তত মেয়েকে নিয়ে দু’মুঠো খেতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘রঞ্জু খুবই দানশীল ছিলেন। ভাইবোনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গরিবদের সাহায্য করতেন। এলাকার কারও বিপদ হলে তিনিই আগে এগিয়ে যেতেন। আমার সঙ্গে তার সম্পর্কটাও খুব ভালো ছিল।’ সুত্র-বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর