শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের; বিশ্বকাপ নিশ্চিত পাকিস্তানের মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের গুজব উড়িয়ে দিলেন শফিকুল আলম শাহজাদপুরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তিন ব্যবসায়ীকে হত্যার চেষ্টা ও জমি দখলের পায়তারা। নোয়াখালীতে থানা থেকে লুট হওয়া গ্যাস গান উদ্ধার যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে ৩৯০ জন আটক  বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক তথ্য চেয়ে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধির সাক্ষাৎ  প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ ব্যারিস্টার কায়সার কামালের উদ্যোগে অটো ও ইজিবাইক চলাচলে টোল ফ্রি সুবিধা জুলাই-মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.৮৪ শতাংশ

নির্বাচনী বছরে আগেভাগে পাঠ্যবই

শাহ আলী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

চলতি বছর তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও নানা ভুলত্রুটি ও অসংগতি নিয়ে বেশ চাপের মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে নির্বাচনী বছর আগেভাগেই পাঠ্যবইয়ের কাজ শেষ করতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের কাজ শেষ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এ বছরের বইয়ের ভুলত্রুটির সংশোধন মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্কুলে পৌঁছানো হবে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম এই চার শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই যুক্ত হবে। তবে এ বছরের মতো যাতে বিতর্কের মধ্যে পড়তে না হয়, এজন্য বইগুলো বারবার দেখা হচ্ছে। আর এ বছর দেওয়া বইগুলোও কয়েকটি পর্যায় শেষে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের কাজ শেষ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতে বা এ বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের সময় স্কুলগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার, লিফলেট ছাপতে ছাপাখানাগুলোও ব্যস্ত থাকে। তাই পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে যেন নির্বাচনী কোনো কাজে জটিলতা সৃষ্টি না হয়, এজন্য আগেভাগে পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে স্কুলে স্কুলে বই ছাপা শেষে স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জনের জন্য আমরা পুরো মার্চ মাসব্যাপী কাজ করেছি। ২৬ জেলার ৫৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেওয়া হয়েছে। ২০ থেকে ২২ মার্চ একেকটি বিষয় নিয়ে ছয়জনের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করেছে। আমাদের বইয়ের লেখকরা ১৫ থেকে ২০ মার্চ তার আশপাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করে রিভিউ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। এই সবকিছু নিয়ে আমাদের ২৭ থেকে ৩১ মার্চ আবাসিক কর্মশালা করে পরিমার্জনের কাজ শেষ করেছি। এরপর সম্পাদনা বিভাগের কাজও শেষ হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের পরিমার্জনের কাজ শেষ।’

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি যে সংশোধন করেছে তা মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হবে। শিক্ষকরা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি বই সংশোধন করে দেবেন। আর আগামী বছর আরও চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম যুক্ত হবে। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের কাজ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি।’

সূত্র জানায়, চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। ক্লাস শুরুর পর বইগুলোর নানা ভুল ও অসংগতি ধরা পড়ে। এজন্য ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া এই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলন পাঠ’ বই চারটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত সাত সদস্যের কমিটি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারটি পাঠ্যবইয়ে ১৮৮টি ভুল ও ৫৮টি অসংগতি পাওয়া গেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ে আছে ১০টি অসংগতি ও ২৫টি ভুল, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ে ৪টি অসংগতি ও ৫০টি ভুল রয়েছে। আর ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে ৩৫টি অসংগতি ও ৯০টি ভুল রয়েছে। একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ে ৯টি অসংগতি ও ২৩ ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।

জানা যায়, গত বছর নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ের কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় ও দফায় দফায় কাগজের দাম বাড়ায় কাজ শেষ করতে দেরি হয়। এমনকি সব বইয়ের কাজ শেষ করতে গত মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর তাড়াহুড়ো করে কাজ করার সুবাদে নিম্নমানের কাগজের বই গছিয়ে দেন মুদ্রাকররা। শেষ সময়ে অনেকেটা জেনেশুনেও চুপ থাকতে বাধ্য হয় এনসিটিবি। কিন্তু এবার যাতে গত বছরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আগেভাবেই শুরু হয়েছে বইয়ের কাজ। আর নির্বাচনী বছর সরকারও যাতে কোনো বিতর্কের মধ্যে না পড়ে সে বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির দরপত্র উন্মুক্তও করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের মতো এ বছরও প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। তবে গত বছর যেহেতু মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকের বই ছাপতে বেশি দেরি হয়েছিল, তাই এবার আগে প্রাথমিকের দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগের মতো এবারও কয়েকজন বড় মুদ্রাকর ও এনসিটিবির একটি সিন্ডিকেট যোগসাজশ করে দরপত্রে অংশ নেওয়া শুরু করেছেন। এতে নির্বাচনের বছরও সঠিক মানের বই পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর