ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় নেতা কাজী রিফাতের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রদলের এক সদস্য মো. মানিক খন্দকার ধারালো অস্ত্র দিয়ে এই হামলা চালান।

ঘটনার পেছনে কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত শনিবার বিজয়নগর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটি ঘোষিত হয়। এরপর কাজী রিফাত তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এক নেতাকে অভিনন্দন জানান। রিফাতের এমন একটি শুভেচ্ছা বার্তাকেই কেন্দ্র করে এই প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

আহত রিফাত অভিযোগ করে জানান, রবিবার (১৫ জুন) রাত ১০টার দিকে উপজেলার পাইলট হাইস্কুল মোড়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী মানিক খন্দকার ও তার সঙ্গে থাকা মামুন রেজা নামে এক যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা চালায়। এসময় রিফাত গুরুতর আহত হন। তিনি সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।

এই হামলার ঘটনায় ছাত্রসমাজ, স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ বলেন, “সামনে নির্বাচন আসছে, এর প্রেক্ষিতে বিএনপি মনে করছে তাদের আর কোনো প্রতিপক্ষ নেই। এনসিপির উত্থানে তারা ভীত হয়ে এ ধরনের পরিকল্পিত হামলার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই হুমকি-ধমকিতে আমাদের দমানো যাবে না। আমরা শেখ হাসিনার সময়েও জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সমাজের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো। তারা মনে করছে হামলা করে আমাদের থামিয়ে দেবে, কিন্তু এটা তাদের বড় ভুল।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা তাজুল ইসলাম ও আবু বকর এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “যাদের রক্তের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, আজ তাদের উত্তরসূরিদের দমন করার চেষ্টা চলছে। কাজী রিফাত, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও আপোষ করেননি, তাকেই এখন ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের হাতে হামলার শিকার হতে হলো। এটা শুধু একজন রিফাতের উপর নয়, এটি পুরো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা।”
তারা আরও বলেন, “আমরা এই বর্বর, কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বিচার চাই এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। আমরা জানিয়ে দিতে চাই—রক্তের উত্তরসূরিরা মাথা নত করে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রদলের নেতা ইকবাল ভূইয়া বলেন, “আমরা কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। ছাত্রদল সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে এসেছে। এনসিপি বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। যেটি ঘটেছে, সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হোক।”