রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
একটি স্বতন্ত্র স্থায়ী নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বড়াইগ্রামে চাঞ্চল্যকর জুঁই হত্যার ঘটনায় ৫ কিশোর গ্রেফতার.!! মাধবপুরে ২৬ বোতল ভারতীয় মদসহ দুই যুবক আটক এনসিপি এখন আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে হাত মিলিয়েছে: মুরাদনগরে জনসভায় কায়কোবাদ এনসিপি এখন আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে হাত মিলিয়েছে: মুরাদনগরে জনসভায় কায়কোবাদ শিবগঞ্জে মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ চুনারুঘাট উপজেলায় দিনেদুপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা কোটি টাকার ইয়াবা লুট করেছে কক্সবাজারে,নৈপথ্যে ছদ্মবেশী রবিউল! আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মার্কেটগুলোয় গোয়েন্দা নজরদারি

শাহ আলী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

একের পর এক ঘটছে মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা। কেবল সাধারণ ক্রেতা কিংবা ব্যবসায়ীদের নয়, উদ্বিগ্নতার পালক স্পর্শ করেছে খোদ সরকারের উচ্চ মহলকেও। আগুনের এসব ঘটনা আসলেই দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা, তা খুঁজে বের করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। একই সঙ্গে নাশকতার ঘটনা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গত দুই সপ্তাহের জরিপ শেষে রাজধানীতে সম্প্রতি ৫৮টি মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তবে প্রকৃত চিত্র হলো, বেশির ভাগ মার্কেটের সামনে সে ব্যানারটি নেই। কারা সরিয়েছে এ বিষয়েও কোনো সদুত্তর নেই মার্কেট কর্তৃপক্ষের।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেটে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈদের আগে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বড় দুটি আগুন লাগার ঘটনা প্রায় একই সময়ে ঘটেছে।’ এসব আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তারা।

গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে ভোর ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ১৫ এপ্রিল নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে। কাকডাকা ভোরে অনেকটা একই সময়ে দুটি জনবহুল ও জনপ্রিয় মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে রাজধানীতে পর পর কয়েকটি মার্কেটে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করতে নতুন নতুন কমিটি করছেন বলে দাবি করেছে বিভিন্ন মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, এরই মধ্যে তারা ফায়ার ফাইটারসহ নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি সচল এবং সেগুলো রিফিল করাসহ সব ঠিকঠাক আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে তারা। আগুন ও রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপকমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, নাশকতার বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি মার্কেটের ইলেকট্রিক ওয়্যারিং সিস্টেমটিও ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ বিদ্যমান বৈদ্যুতিক তারগুলো প্রকৃতপক্ষেই এই পরিমাণ বিদ্যুতের লোড নিতে পারে কি না তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সঙ্গে মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ঠিকঠাক আছে কি না এর সঙ্গে কোনোভাবেই কম্প্রমাইজ করা উচিত হবে না। অগ্নিনির্বাপণে পানির বিকল্পের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নাম রয়েছে রাজধানীর টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেটের। এতে সাড়ে ৭০০ দোকান রয়েছে। বেশির ভাগ দোকানই সেমিপাকা। গতকাল মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদে বিক্রির জন্য প্রচুর জামাকাপড়সহ নানা ধরনের জিনিসপত্র উঠিয়েছেন দোকানিরা। প্রতি বছর ঈদের আগে মার্কেটটিতে প্রচুর লোকসমাগম ঘটে। কিন্তু গতকাল দুপুরে গিয়ে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। দোকানিরা জানান, বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা এবং গরমের কারণে ক্রেতা কম। সন্ধ্যার পর মার্কেট জমবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস ১ হাজার ১১৫টি মার্কেটকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তবে বঙ্গবাজারের অগ্নিকান্ডের পর গত শনিবার ফায়ার সার্ভিস হালনাগাদ তথ্য হিসেবে ঢাকা অঞ্চলের ৫৮টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানায়। সেগুলোতে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন লাইফ সেভিং ফোর্সের সদস্যরা। সে অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় ৯টি মার্কেট অতিঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ।

গোয়েন্দারা বলছেন, প্রতিটি মার্কেটে ভোররাতে উর্দি পোশাকের পাশাপাশি সিভিল ড্রেসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতনরা ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। মশার কয়েল ব্যবহার না করা, বিড়ি-সিগারেট যাতে না খাওয়া হয় সে জন্য দফায় দফায় তাদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সচল রাখা ও ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের মধ্যে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের দুকু টাওয়ারও রয়েছে। এ মার্কেটের ম্যানেজার মো. ইমান আলী গতকাল জানান, দুকু টাওয়ারটি আটতলা। ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত জুতার গুদাম। নিচতলায় বীজের মার্কেট। মার্কেটে আগুন নেভানোর সব ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। প্রতি তলায় আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি আছে। আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণও রয়েছে মার্কেটের কর্মীদের। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মার্কেট কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা ৩০ দিনের মধ্যে তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজাবে। আমরা সব সময়ই সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলে আসছি। না হলে একা ফায়ারের পক্ষে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

৫৮ অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট : ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট হলো নিউমার্কেট রোডের গাউসিয়া মার্কেট, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, চকবাজারের আলাউদ্দিন মার্কেট, শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, শহিদুল্লাহ মার্কেট, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, মায়া কাটারা (২২ মার্কেট) ও সিদ্দিকবাজারের রোজনীল ভিস্তা।

মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ : জুরাইনের আলম সুপার মার্কেট, খিলগাঁওয়ের উত্তরা মার্কেট, ডেমরার সালেহা শপিং কমপ্লেক্স, মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, দোহারের জয়পাড়ার লন্ডন প্লাজা শপিং মল, ওয়ারীর র‌্যাংকিন স্ট্রিটের এ কে ফেমাস টাওয়ার, রোজভ্যালি শপিং মল, নিউ মার্কেটের মেহের প্লাজা, মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, ইসমাইল ম্যানশন সুপারমার্কেট, সুবাস্তু অ্যারোমা শপিং মল।

ঝুঁকিপূর্ণ : এ তালিকায় রয়েছে জুরাইনের বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁওয়ের তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার মার্কেট, তিলপাপাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজা, ইসলাম প্লাজা, ডেমরার নিউ মার্কেট, দোহারের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, এ হাকিম কমপ্লেক্স, ঢাকার নবাবগঞ্জের শরীফ কমপ্লেক্স, মিরপুরের বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, কাফরুলের ড্রিমওয়্যার, মিরপুর-১-এর এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, তেজগাঁও শিল্প এলাকার শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, জাকারিয়া ম্যানশন, লালবাগের হাজী আবদুল মালেক ম্যানশন, ওয়ারীর ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড, মিরপুর রোডের গ্লোব শপিং সেন্টার, মিরপুর রোডের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনীচক মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, নূরজাহান সুপার মার্কেট, হজরত বাবুশাহ হকার্স মার্কেট, নীলক্ষেতের ইসলামিয়া বই মার্কেট, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, সিদ্দিকবাজারের হান্নান ম্যানশন, সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২, গুলিস্তানের নগর প্লাজা, সিদ্দিকবাজারের রোজ মেরিনার্স মার্কেট ও সিদ্দিকবাজারের দুকু টাওয়ার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর