শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শিবগঞ্জে মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ চুনারুঘাট উপজেলায় দিনেদুপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা কোটি টাকার ইয়াবা লুট করেছে কক্সবাজারে,নৈপথ্যে ছদ্মবেশী রবিউল! আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহীদ মুজাহিদের মা-বাবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করবে : প্রধান উপদেষ্টা বাজার পরিষ্কার পরিছন্নতা ও ড্রেনের কাজ চলমান মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে গেছে ৬ মাসের শিশু বাচ্চা স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় হাজির স্বামী: পুটি মাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল মৌসুমীর

মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

শাহ আলী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে শেষ পর্যন্ত নীতি সুদহার বা রেপো রেট এক ধাক্কায় দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আজ থেকে রেপো রেট হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এতদিন নীতি সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটারি পলিসি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে রাত পৌনে ৯টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

নীতি সুদহারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো টাকা ধার নেয়। সুদহার বাড়ানোয় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি সুদে অর্থ ধার করতে হবে। এর প্রভাব দেশের সরকারি-বেসরকারি সব খাতের ওপর পড়বে। দেশের ব্যাংকগুলো ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও বাড়াবে। বাজারে অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘‌ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য নীতি সুদহার দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।’

২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এলেও সেটির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগস্টে মূল্যস্ফীতির এ হার ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য অর্থনীতিবিদরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদনীতির সমালোচনা করে আসছিলেন। সরকারের মধ্যেও এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলে আসছিল, দেশের বিরাজমান মূল্যস্ফীতি টাকার অবমূল্যায়নের ফল। এতে সুদহারের ভূমিকা খুব বেশি নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলোর মূলে অব্যবস্থাপনা, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, সুশাসনের ঘাটতিসহ বহুবিধ কারণ রয়েছে। এ কারণে শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির সংকট কাটাতে হলে দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার লাগবে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‌নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যাংকগুলো এখন ঋণের সুদহার বাড়াবে। তবে সুদহার বাড়িয়ে হলেও এসএমই, কৃষিসহ দেশের উৎপাদনশীল খাত যেন ঋণ পায়, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিলগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে এসব তহবিলের আকার বাড়াতে হবে। প্রভাবশালী ও বড় গ্রাহকরা আগের মতোই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গেলে অর্থনীতির কোনো উপকার হবে না।’

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২২ মাসে সর্বনিম্ন

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়ে ঋণের লাগাম টানার উদ্যোগের মধ্যেই বাজারে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। চলতি বছরের আগস্টে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে, যা গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সর্বশেষ জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। বিপরীতে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, সুদহার কম থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে দেশের আমদানি ১৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে। আবার দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্যের সংকট চলছে। উদ্যোক্তারা চেয়েও ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসহ চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এসব কারণে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোয় ঋণের প্রবৃদ্ধি আরো কমবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর