সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপি’র ১৬৩০ মামলা রাজৈর পল্লী উন্নয়ন সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের অফিসে যোগদান চাটমোহরে ৩০ বস্তা ও এমএস এর চাল আটক করলো জনতা পরে নিলামে বিক্রি সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু গ্রেফতার  ভারতের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ফিরলেন শ্রেয়াস, ইশান সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের পানি পান করে ৩ মহিষের মৃ/ত্যুর অভিযোগ সন্দ্বীপে কালাপানিয়া হাই স্কুল সড়ক বেহাল: দুর্ভোগে ৪ হাজার মানুষ আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে শহীদ নাজমুলের স্ত্রীর সকল নারীর সুরক্ষা বাড়াতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে শহীদ নাজমুলের স্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে শহীদ নাজমুলের স্ত্রীর
আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে শহীদ নাজমুলের স্ত্রীর ।।সংগৃহীত ছবি

শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের ওপর স্বৈরাচারী সরকারের নির্মম দমন-পীড়নের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করতে গিয়ে শহীদ হন মো. নাজমুল কাজী। তার স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এখন আড়াই বছর বয়সী একটি মেয়েকে নিয়ে চরম আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

তিন সদস্যের পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন নাজমুল। তার শহীদ হওয়ার পর আড়াই বছর বয়সী মেয়ে ও সংসার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মারিয়া।

৩৪ বছর বয়সী নাজমুল ছিলেন এক সময়ের কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করার সময় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এক ফেসবুক পোস্টে আন্দোলনকারীদের খাবারের প্রয়োজনীয়তার কথা পড়ে তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।

সেই সময় যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকা ভয়ানক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনের চরম মুহূর্তে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা এই মানুষটির মৃত্যু ছিল চরম নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত।

শোকাহত মারিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী ছিলেন খুব দয়ালু মানুষ। ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখে তিনি বাড়ি থেকে বের হন।’

তিনি জানান, ‘আমিও তার সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার মাত্র দুই বছর বয়সী ছোট মেয়ের কারণে উনি আমাকে সঙ্গে নেননি।

উনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার এক ঘণ্টা পর এক শিক্ষার্থী ফোন করে জানান যে, নাজমুলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে মারিয়া জানান, খাবার বিতরণের সময় সরকারপন্থী একদল সন্ত্রাসী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। কেউ একজন ভারী কিছু দিয়ে নাজমুলের মাথায় আঘাত করে। পরে তার মোবাইলটিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মারিয়া যখন হাসপাতালে পৌঁছেন, তখন নাজমুলের নিথর দেহ দুইটি মৃতদেহের পাশে একটি স্ট্রেচারে পড়ে ছিল।

‘হামলায় আমার স্বামী মাথায় গুরুতর আঘাত পান। কিন্তু তার ক্ষতস্থানে একটা ব্যান্ডেজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি,’ বলেন মারিয়া। ‘আমি চিৎকার করে আহাজারি করছিলাম, তখন কয়েকজন ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে শনির আখড়ার অনাবিল হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা পর্যন্ত না দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। মারিয়া অভিযোগ করেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ওই সময় হাসপাতালে আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা না দিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল।

সালমান হাসপাতালের ম্যানেজার সুরভী সোহানা জানান, আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ তাদের হাসপাতালের সিসিটিভির হার্ডডিস্ক জব্দ করে এবং আহতদের সেবা দেওয়ায় হেনস্তা করে।

নাজমুলের মরদেহের ছাড়পত্র নিতে গিয়েও পরিবারকে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় বলে জানান মারিয়া। পরদিন বিকাল ৪টার দিকে তারা মরদেহ বুঝে পান এবং তাকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

নাজমুলের স্ত্রী জানান, তিনি ও তার মেয়ে আরিয়ানা কাজী নুজাইরা বর্তমানে রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকার মোহাম্মদবাগে একটি দুটি কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে বাস করছেন। তার শ্বশুর সেলিম কাজী, শাশুড়ি নাজমা বেগম এবং দুই দেবর সাজারুল ও হামজা গ্রামে থাকেন।

মারিয়া বলেন, তার স্বামী কানাডা যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বছর আগে ব্যবসা বন্ধ করে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ শুরু করেন। মৃত্যুর দিন সকালে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কান দূতাবাসে ভিসার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন।

‘এখন সেসব কাগজ শুধুই স্মৃতি,  ‘বলেন তিনি।

নিজের কঠিন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা নেই, ভাই নেই, কেবল এক বোন আর দুলাভাই আছেন। শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকেও তেমন কোনো সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই।’

স্বামীর স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানানোর। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন পূরণের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, কারণ ছোট মেয়েকে রেখে কোথাও চাকরি করাও সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। ফলে আর্থিক সংকট তাকে ঘিরে ধরেছে।

‘এ অবস্থায় শহরে থাকা কষ্টকর, আবার গ্রামে যাওয়ারও উপায় নেই,’ বলেন মারিয়া। ‘২৪ বছর বয়সে বিধবা হওয়ার যন্ত্রণাটা আপনি কেমন করে বুঝবেন?’

তিনি সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় আসুক, অন্তত এতিম শিশুদের কথা বিবেচনা করে শহীদ পরিবারগুলোর কথা ভাবতে হবে।’

সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে। কেউ বোঝে না এই কষ্ট, কেবল যারা হারিয়েছে, তারাই জানে।’

বর্তমানে জামায়াত থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা দিয়েই কোনওভাবে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানান মারিয়া।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারানোর কয়েক দিন আগে শহীদ পরিবারের জন্য দশ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিল, কিন্তু তখন জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি তা ভাঙাতে পারেননি। এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সহায়তা কামনা করছেন তিনি।

নাজমুলের বাবা সেলিম কাজী (৫০) বাসসকে বলেন, ‘ছেলের মৃত্যু আমাদের পুরো পরিবারকে বিপর্যস্ত করেছে। প্রতি মাসে ওর পাঠানো ২০ হাজার টাকায় সংসার চলত। এখন আমি গরুর দুধ বিক্রি করে কোনোরকমে দিন পার করছি।’

তিনি জানান, পরিবারের চাহিদা মেটাতে ধার করে ছোট ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। ‘নাজমুল ছিল খুব সহজ-সরল ছেলে। আমি এখনও ‘আব্বা’ ডাকটা মিস করি। বাকি দুই ছেলের মুখে সেই ডাক শুনেও সাধ মেটে না,’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সুত্রঃ বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর