উলিপুরে মাদরাসাগুলোতে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ বাণিজ্য ও অবৈধ পদন্নোতির হিড়িক

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাদরাসায় মাদরাসায় চলছে অবৈধ পদন্নোতি। এক মাদরাসায় পদন্নোতি দিয়ে নিয়োগ বানিজ্য দেখে আরেক মাদরাসা মেতে
ওঠে একই পন্থায়। বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ছাড়াই চর কলাকাটা গণি মিয়া দাখিল
মাদরাসার সুপার মশিউর রহমান উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসায় এসব অবৈধ পদন্নোতিতে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পদন্নোতির এসব ছল চাতুরি দেখেও অদৃশ্য কারণে কোন পদক্ষেপ ও কৈফিয়তও নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার ৩টি মাদরাসার কাগজপত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে এসব অবৈধ
পদন্নোতির ঘটনা। সংশ্লিষ্ট মাদরাসার সুপার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহায়তায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদেরকে মোটা
অংকের উৎকোচ দিয়ে পদন্নোতির এসব ঘটনা ঘটান। সরেজমিন, নারিকেল বাড়ী দাখিল মাদরাসার তৎকালীন সুপার রবিউল আউয়াাল অফিস
সহকারীর পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে অফিস সহকারী মাহফুজার রহমানকে ইবতেদায়ী মৌলভী পদে এমপিও আনেন। অফিস সহকারী পদে কয়েক জনের নিকট টাকা নিয়েও জটিলতার কারণে নিয়োগ দিতে পারেন নাই তিনি। এমতাবস্থায় নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা লেনদেনের কারণে ওই মাদরাসায় তাকে শারীরিক হেনস্তার ঘটনাও ঘটে। ওই নিয়োগের কোন দায় নিচ্ছেন না ভারপ্রাপ্ত সুপার মাঈদুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বলেন, মাহফুজুর রহমান এর নিয়োগ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।
চর কলাকটা গণি মিয়া দাখিল মাদরাসায় বিধি বহির্ভূত ভাবে ২৬ জন শিক্ষক কর্মচারী থাকলেও এমপিও শীটে ৪ জনের কোন পদবী উল্লেখ করা হয় না।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক জরিপ-২০২৩ এর তথ্যে ওই ৪ জনের মধ্যে মোখলেছুর রহমানকে সহকারী শিক্ষক (জুনিয়র) হিসেবে পাওয়া যায়। কিন্তু মাদরাসায় তাকে অফিস সহকারী হিসেবেই আর মনিরুজ্জামানকে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার হিসেবে
জানেন মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীগণ। এ বিষয়ে সুপার মশিউর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি রুঢ় স্বরে বলেন, আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার
আপনি কে ? আপনি কি আমার কর্তৃপক্ষ ? পরে তিনি কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে হাতিয়া ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার এপ্রিল ২৫ মাসের এমপিও শীটে ১৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে ৫ জন শিক্ষক কর্মচারীর কোন পদবী পাওয়া
যায়নি। ওই মাদরাসার সুপার বদর উদ্দিন আহম্মেদ নিয়োগ বাণিজ্য করার কারণে পদগুলো প্রকাশ্যে আনতে পারছেন না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক
শিক্ষক কর্মচারী জানিয়েছেন। কিন্তু হাতিয়া ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার বিল বিতরণ শীটে ইদ্রিস আলীকে ইবতেদায়ী মৌলভী হিসেবে দেখিয়ে আসছেন
তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, সুপার বদর উদ্দিন গোপনে তার মেয়েকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে ইদ্রিস আলীকে মাসিক বিল বিবরনী শীটে
ইবতেদায়ী মৌলভী পদে এমপিও আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর একজন উপ পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনটা হয়ে থাকলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপ পরিচালক নিজেকে কোড
করতে নিষেধ করে জানান, প্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।