উল্লাপাড়ায় পাঁচ বিঘা জমি বেচে একটি রেডিও! খবর শুনতেন ১০ গ্রামের মানুষ
আলতাফ হোসেন। বয়স ৬৬ বছর। অনেকের কাছে রেডিও আলতাফ নামে পরিচিত। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রহিমাবাদ গ্রামে। আলতাফ হোসেনের বাবা দেলোয়ার হোসেন ১৯৬৫ সালে ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে জাপানি ব্র্যান্ডের একটি রেডিও কিনে সে সময় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তখনকার সময়ে আশপাশের ১০/১২ গ্রামের মধ্যে এটিই ছিল একমাত্র খবর শোনা ও বিনোদনের মাধ্যম। বাবার ওই পুরনো দিনের রেডিওটি আজও অতিযতেœ আগলে রেখেছেন আলতাফ।
তার বাড়িতে গেলে আলতাফ হোসেন পুরনো দিনের সেই রেডিও বের করে পরিষ্কার করে ঘটনার বিস্তারিত বলেন। তিনি বলেন বাবার রেখে যাওয়া পুরনো দিনের রেডিওটি প্রতিদিন বের করে পরিষ্কার করি। পরিস্কার শেষ হলে যতœসহকারে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে বাক্সে রেখে দেই।
তিনি জানান,বাবা দেলোয়ার হোসেন ১৯৬৫ সালে ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে এই রেডিওটি কিনেছিলেন। সেই সময় প্রতি বিঘা ৫০ টাকা করে ৫ বিঘা জমি ২৫০ টাকায় বিক্রি করে পাবনা থেকে জাপানি তিন ব্র্যান্ডের একটি রেডিও কিনে আনেন। সেই সময় দেলোয়ার হোসেনের এই রেডিও শুনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত তার বাড়িতে।
এরপর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের মানুষ যুদ্ধের সব খবর শুনতেন এই রেডিওর মাধ্যমে। আর এই রেডিওর মাধ্যমে যুদ্ধের খবর সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে পাকবাহিনী তাকে নির্যাতন করে তার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরও এই রেডিওর প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ছিল বাবার (দেলোয়ার হোসেন)। বিশেষ করে সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনা ও বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন খোঁজখবর রাখতেন এই রেডিওর মাধ্যমে। খবর শোনার প্রবল আগ্রহ ছিল বাবার। রেডিওটি সচল রাখতে ব্যাটারি কেনার টাকা না থাকায় পরবর্তী সময়ে বেশকিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৭৫ সালে অর্থের অভাবে গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে শখের রেডিওটি বন্ধক রেখে মারা যান বাবা (দেলোয়ার হোসেন)।
মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আলতাফ হোসেন ২০২২ সালে বন্ধুক রাখা সেই রেডিওটি ফিরিয়ে আনেন। সেই থেকে বাবার শেষ স্মৃতি শখের রেডিওটি আগলে রেখেছেন তিনি। ৪৮ বছর পর বাবার রেডিওটি হাতে পেয়ে খুশি ছেলে আলতাফ। আধুনিক সভ্যতার যুগে রেডিওর কদর না থাকলেও আলতাফ তার বাবার রেডিওটি নিয়ে এখনো ঘুরে বেড়ান।এ জন্য গ্রামে তিনি এখন রেডিও আলতাফ নামে পরিচিত ।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো জানান,জমি বিক্রি করে রেডিও কেনার ঘটনাটি সত্য। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন সব জমি বিক্রি করে গেছেন। তার ছেলেদের আর কিছু নেই। তবে আলতাফ হোসেন সাদা মনের মানুষ। সবাই তাঁকে ভালোবাসেন। তার স্ত্রী চায়না খাতুন আমার পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য। বাবা দেলোয়ার হোসেনের শেষ স্মৃতি রেডিওটি অতিযত্নে রেখেছেন আলতাফ হোসেন।