রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে ফ্যাসিবাদের আশঙ্কা : শ্যামল গাইবান্ধায় চেম্বার অব কামার্সের কমিটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহণ নাসিরনগরে তিতাস নদীতে ডুবে আপন দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু চাটমোহরে বড়াল নদীর কচুরিপানার উপর থেকে ভাসমান অবস্থায় ৫ মাস বয়সি শিশুর মরদেহ উদ্ধার পাকিস্তানের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডঃ নূরুল হুদা ঢাকায় আটক ইসরাইলি হামলায় লেবাননে নিহত ১  সরিষাবাড়ির ঐতিহ্যবাহী আর ইউটি কলেজ জাতীয়করণের দাবি চুনারুঘাটে কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ফের ২২ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করল বিএসএফ জাপান সফর শেষে দেশের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা

কুম্ভমেলায় পুলিশ কনষ্টাবলকে মারধর করে ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে জুয়াড়িরা।

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি।
প্রকাশিত হয়েছে : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫
কুম্ভমেলায় পুলিশ কনষ্টাবলকে মারধর করে ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে জুয়াড়িরা।
কুম্ভমেলায় পুলিশ কনষ্টাবলকে মারধর করে ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে জুয়াড়িরা।

মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী শ্রী শ্রী গনেশ পাগলের মেলায় (কুম্ভমেলা) জুয়াড়িদের সাথে কথা কাটা কাটির এক পর্যায় জুয়াড়িরা পুলিশ কনেষ্টবলের নিকট থেকে ৩০ রাউন্ড শর্টগানের বুলেট ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুম্ভমেলা বা গণেশ পাগলের মেলার মূল মাঠের মধ্যেই বসেছে সারি সারি জুয়ার আসর। প্রায় ২০টি জুয়ার আসরে চলছে রমরমা জুয়া খেলা। বড় জুয়ার আসরের কোট বানানো হয়েছে বিভিন্ন মডেলদের ছবি দিয়ে। আর ছোট জুয়ার কোট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চরকি। প্রতিটি জুয়ার আসর ৫-৬ জন করে পরিচালনা করছেন। মুহূর্তেই টাকায় হাত ভরে যাচ্ছে জুয়ার আসর পরিচালকদের। একই সাথে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে এসময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে কয়েকটি জুয়ার আসর ফেলে রেখে পালিয়ে যায় জুয়াড়িরা।অপরদিকে কালী মন্দিরে প্রকাশ্যে চলে গাঁজা সেবন ও বিক্রি কার্যক্রম। সেখানে সুব্যবস্থাপনায় শত শত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা একত্রে বসে গাজা সেবন করছেন। তবে সকলের জন্য মাদক সেবন ও বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ওখানে আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। মেলার মাঠে জুয়ার আসর পরিচালনাকারী মাসুদ নামে এক জুয়ারি বলেন, জুয়ার খোটের বিষয় সব কমিটির (গণেশ পাগল সেবাশ্রম কমিটি) লোকজন জানে, আমি কিছু জানি না। আমাকে ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করাইতেছে।
কালিপদ নামে আরেক জুয়াড়ি বলেন, এই জুয়ার আসরটা প্রসাদ মেম্বার বসাইছে। সে কদমবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি সদস্য। আমি শুধু দাড়াই আছি। কিছু বলি নাই।

এ ব্যাপারে কদমবাড়ি গণেশ পাগল সেবাশ্রমের সভাপতি মিরন বিশ্বাস দৈনিক বাংলার সংবাদ কে বলেন, জুয়ার আসর বসার ব্যাপারে কমিটি কিছু জানে না। আমরা যতবার যেনেছি পুলিশের মাধ্যমে ভেঙে দিয়েছি।

তবে প্রকাশ্যে গাজা সেবনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটা বলা যাবে না। তবে লালনের মাজারে যেমন চলে, এখানেও তেমনই চলে। এটা প্রশাসনও জানে। আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রশাসন পারে নাই। এখন আমরা কি করবো!

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক বাংলার সংবাদ কে বলেন, পুলিশ কনস্টেবলের ওপর হামলার ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থালে আছি। জুয়া খেলা ও গাজা সেবনের বিষয়টি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। অসংখ্য লোক, এ কারণে কন্ট্রোল করা একটু টাফ। তারপরও আমাদের লেভেল থেকে এটা জিরো টলারেন্স।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়িতে শুরু হয় প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা বা গণেশ পাগলের মেলা যা স্থানীয়ভাবে কামনার মেলা নামেও পরিচিত। আগামী শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত ৪ দিনব্যাপী এ মেলা চলবে। মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের স্মরণে আয়োজিত এই ধর্মীয় উৎসবে দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। এ মেলাকে কেন্দ্র করে সহস্রাধিক ছোট বড় বিভিন্ন দোকান বসেছে। প্রতি বছর ১৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটে এ মেলায় বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।

এর আগে মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত থেকেই দলে দলে জয় ডংকা ও নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয় হরিবল ও জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বণি করতে করতে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সাধু সন্নাসী ও ভক্তবৃন্দরা বাসে, ট্রাকে, ট্রলারে ও পদব্রজে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শত বছর ধরে মাদারীপুর রাজৈরের কদবাড়ির দিঘীরপাড় এলাকার মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাম্বলীদের শাস্ত্রমতে সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত সুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে ভারতীয় মুনি ঋষিরা কুম্ভ মেলার আয়োজন করে আসছেন। শত বছর আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ সের চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় এলাকায় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে এখানে মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মূল মেলা হয় এক রাতের জন্য। তবে এই মেলা চার দিন চলবে। কখনও কখনও সপ্তাহ ব্যাপীও হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন দেবদেবতার ১০৮টি মন্দির রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর