জেলেরা জরিমানা দিলেও মেলেনি সরকারি ত্রাণ!

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে জেলেদের ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু, এসময় জেলেরা ইলিশ ছাড়া অন্যান্য মাছ ধরতে পারবেন। গেলো ৭ অক্টোবর শুরু হয়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মাছ ধরার অপরাধে প্রশাসনিক অভিযান ও জেলেদের জরিমানা চললেও এখনও পৌঁছায়নি তাদের জীবীকার অসময়ে সরকারের দেয়া সহযোগিতার চাল। জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যা বিতরণের কথা নদীপাড়ের প্রকৃত জেলেদের মধ্যে, তাও আবার নিষিদ্ধ মৌসুমের শুরুতেই। এই নিষিদ্ধ সময়ে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা রয়েছে, ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ এবং বিনিময় না করতে।
দৌলতপুরের পদ্মায় বেআইনী জাল ব্যবহারসহ বিভিন্ন মৌসুমে অনিয়মের দৃশ্য স্পষ্ট থাকলেও নদীপাড়ে নেয়া হয় না কোন সচেতনতা বৃদ্ধি মূলক ব্যবস্থা। উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগ আয়োজিত বছরের কয়েকটি অনুষ্ঠান কেবলই আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর হয়ে থাকে। সরেজমিনে জানা যায়, নদীতে নামা অনেক জেলে জানেনই না ঠিক কি কারণে কবে থেকে নিষেধ ইলিশ ধরা। আবার, সরকারি সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে জেলেদের বাদ পড়ার। তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, মাছ ধরা বন্ধ রেখেও যেন পেটের ভাতের অভাব না হয় সেকারণে সরকার চাল বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু সে চাল হাতে আসার আগেই আমাদের মাছ না ধরে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না। ইতোমধ্যেই মৎস রক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে বেশ কয়েকজন জেলেকে জরিমানা করেছে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারি বরাদ্দ জেলেদের হাতে এখনও না পৌঁছানোর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক নানা সুত্রে জানা গেছে এই বরাদ্দ উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগে যায়, তারপর বিতরণ করতে গিয়ে লাগে আরও সময়। জটিলতা দেখা দেয় স্থানীয় পর্যায়ে জেলের তালিকা করতে। কুষ্টিয়া জেলা মৎস কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, দৌলতপুরসহ দু’একটি উপজেলায় জেলেদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে দেরি হওয়ায় বরাদ্দের চাল বিতরণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
নদী তীরবর্তী ইউনিয়ন ফিলিপনগরের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু বলেন, জেলেদের বরাদ্দ পাওয়া চাল শিগগিরই বিতরণ হবে বলে জেনেছি। আমার ইউনিয়নে এই চাল পাবে ১শ’জন জেলে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, ২২ অক্টোবর ১শ’ ১৬ বস্তা চাল বুঝে পেয়েছি। বিতরণ করা হবে। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ জানান, দৌলতপুরের চারটি ইউনিয়নের ৬শ’৩০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হবে ইতোমধ্যে তালিকার কাজ শেষ হয়েছে, আমরা চিলমারী ইউনিয়নের কিছু অংশ বিতরণ করেছি। উপজেলা মৎসজীবী লীগের নেতা আনিসুর রহমান চৌধুরী পল্টন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকেও তালিকা দেয়া হয় সেগুলো ঠিকমতো আসে না। বিভিন্ন প্রকৃত জেলেরা সরকারি সহযোগিতা বঞ্চিত হলে আমাদের কাছেও আসেন, এবছরও আসছেন। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, এই ২২ দিনে নদীতে জাল নামানোই নিষেধ। পরিদর্শন করে দেখেছি জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের ডিম ও পোনা মাছ আটকাচ্ছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে, চাল পর্যায়ক্রমে সবাই পাবে। এদিকে, সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সময়ের বাঁকি আর মাত্র কয়েকদিন।