টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ভূমি অফিসে

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ভূমি অফিসের তহশিলদার কবির মিয়া টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে অভিযোগ করেছেন সেবা নিতে আসা অনেক ভূক্তভোগী। জমি-জমার নামজারি, কাগজপত্র দেখিয়ে দেয়া, কোনো তথ্য নেয়া ও খাজনা আদায়ে নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া জমি-জমা সংক্রান্ত কোনো তদন্ত আসলে টাকা ছাড়া নেয়া যায় না কোনো রিপোর্ট। টাকা না দিলে বিপক্ষে চলে যায় রিপোর্ট। কোন তদন্তের বিষয় দু’-পক্ষই যদি যোগাযোগ করে তাহলেতো কোন কথাই নেই। দুই পক্ষের কাছ থেকে নেয়া হয় টাকা। যে পক্ষ বেশী টাকা দেয় তার পক্ষেই যায় রিপোর্ট। নিজ হাতেই করেন লেনদেন। এছাড়াও অফিস স্টাফ সহ স্থানীয় কিছু দালাল তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। টাকা ছাড়া কোন কাজই যেন করতে পারেন না এই কর্মকর্তা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টাকা দিয়েই ম্যানেজ করে তিনি এসব করেন বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। এই ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না তা আশে-পাশের দোকানদারসহ স্থানীয় ও সেবা নিতে আসা সবাই জানে। ডসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনেকে মৌখিক অভিযোগ দিলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার দোহাই দিয়ে তহশিলদার কবির মিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেননি তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমি অফিসেও লোকজনের ভীড়। ভূমি অফিসের সামনে দুটি কম্পিউটারের দোকান। এই দোকান থেকে অন-লাইনে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন আবেদন করছে ভূমি অফিসের সেবা গ্রহণকারীরা। এই দুই দোকান মালিকসহ অফিসের কর্মচারীরা দালাল হিসাবে কাজ করেন বলেও অভিযোগ আছে। এই দুই দোকানের মালিকদের মধ্যে একজন মোঃ রফিক- তহশিলদার কবির মিয়ার গ্রামের বাড়ির কাছে লোক। তাকে সেখান থেকে দালালী করার জন্য তহশিলদার নিজেই নিয়ে আসেন ভূমি অফিসে।
আশে-পাশের বিভিন্ন দোকানদারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এই অফিসে যে কোন কাজ করতে এলেই টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়। যে কাজগুলো চুক্তিতে হয় সেগুলোর টাকা একত্রে তহশিলদারের কাছে দিলেই কাজ হয়ে যায়। আর যদি কেউ চুক্তি না করেন তাহলে তাকে ধাপে-ধাপে টাকা দিতে হয়। একটি নামজারিতে চুক্তি করলে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা লাগে। এটা কোনো- কোনো ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এছাড়া কোন তথ্য জানতে গেলে বা কাগজ দেখতে গেলে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তদন্তের কাজে এলে বাদী-বিবাদী দু’জনের কাছ থেকেই টাকা নেন উক্ত তহশিলদার। যে যত বেশী টাকা দেয় তার পক্ষে যায় তদন্ত রিপোর্ট। তদন্তের ক্ষেত্রে চুক্তি করলে তা ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকায়ও রফাদফা হয় এবং এর ভাগ উপরে মহলেও চলে যায়। এটা নির্ভর করে তদন্তের ধরণ এবং সম্পদের মূল্যের উপর। আর কেউ যদি চুক্তি না করে তাহলে তাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভূমি সেবা গ্রহণকারীদের একদিকে হয়রানী করা ও অন্যদিকে হাতিয়ে নেয়া হয় বিপুল পরিমান টাকা। আশে-পাশের দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় ও সেবাগ্রহনকারীরা সবাই জানে এই তহশিলদারকে টাকা না দিয়ে কাজ করাননো যায় না। এমনকি এই টাকা উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা সহ অন্যান্য দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও দিতে হয় বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
লাল মিয়া হাওলাদার নামের এক প্রতিবন্ধী বয়স্ক মানুষ তার জমির নামজারি করতে এলে তার কাছ থেকে দাবি করা হয় ৫ হাজার টাকা। সে কোন মতে ৪ হাজার টাকা তহশিলদারের হাতে তুলে দেয়। এতে সে রাজি না হলে পরে ১ হাজার টাকা দিবে বলে ভূমি অফিস থেকে বের হয়ে যান । বিষয়টি জানতে পেরে সেই বয়স্ক প্রতিবন্ধীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা তহশিলদার কবির মিয়াকে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি তা অস্বীকার করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে উক্ত বৃদ্ধকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন এবং কাজটি করে দেয়ার কথা বলেন। এসময় প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ লাল মিয়া হাওলাদার বলেন, আমি গরীব মানুষ, অনেক কষ্টে এই ৪ হাজার টাকা জোগাড় করে এনেছিলাম। তাতে সে রাজি হয় নি। আমি চার হাজার টাকা তাকে দিয়ে পরে ১ হাজার টাকা দেব বলে আসি, আপনারা ছিলেন তাই আমার কষ্টের টাকা ফেরত পেলাম। এখন কাজটা ভালভাবে হলেই হয়।
টাকা নেয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে এরকম অর্থের লেনদেন সব ভূমি অফিসেই হয় বলে মন্তব্য করে তহশিলদার। এছাড়া উপজেলা অফিস সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব করা হয় বলে জানা গেছে। এসব দূর্ণীতির বিষয়ে উক্ত তহশিলদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি গৌরব করে বলেন, সাংবাদিকরা লিখে আর কি করবেন। তিনি এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের মিষ্টি খেতে কিছু দিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যর্থ হন এবং হুমকিস্বরুপ বলেন আপনারা চলে যান, এ বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিব না।
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ-উল-আরেফিন এর কাছে সরেজমিনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে মৌখিক দু’একটা অভিযোগ পেয়েছি, লিখিত কোন অভিযোগ পেলে বা কোন প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।