মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে নানান অনিয়মের অভিযোগ

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরে সরকারী এমপিও ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও উক্ত কলেজের নামকরণটি নিয়েও রয়েছে মানুষের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ ও বিভাজন।
উক্ত কলেজটি ফরিদপুর- বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর সড়ক বিভাগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাদারীপুরের প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত মাদারীপুরের মস্তফাপুরে অবস্থিত। কথিত আছে, আওয়ামীলীগের ১৫ বছরের শাসনামলে মাদারীপুর সদর-২ আসনের সাবেক এমপি ও নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান যিনি খুন-দূর্ণীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মামলার আসামী হয়ে জেলে রয়েছেন- তিনি তার তখনকার ক্ষমতার বলে সুকৌশলে উক্ত কলেজটির আগের একটি নাম পরিবর্তন করে তার নিজ নামে নামকরণ করে নিয়েছেন-যা পরিবর্তন করে শুধুমাত্র ঐতিহাসিক মস্তফাপুর-মাদারীপুর কলেজ নামে নামকরণ করার দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এছাড়াও উক্ত কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কলেজের এডহক কমিটি থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটির কাছ থেকে জানা গেছে- কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে বিধিবহির্ভূতভাবে শাজাহান খানের আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী ঘরাণার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফারুক মাতুব্বর নামে একজনকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং এখন তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলেজটি ২০১১ সালে অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন ফারুক হোসেন মাতুব্বর। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা ও শাজাহান খানের ঘনিষ্ট সহচর ফারুক হোসেন মাতুব্বরকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়-যা অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা অনিয়মের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ পেতে হলে তার কমপক্ষে ১২ বছর প্রভাষক এবং ৩ বছর উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই অভিজ্ঞতা ছিলো না ফারুক মাতুব্বরের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসমাতুন নেছা বলেন, ফারুক হোসেন মাতুব্বর এই কলেজের অধ্যক্ষ না। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ দাবী করেন এবং তিনি জালিয়াতি করে নিয়োগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সরেজমিনে বীরমুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি অহিদুজ্জামান খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফারুক হোসেন মাতুব্বর ২০১৫ সালে কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১৭ সালে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফারুক হোসেন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন বলে দাবী করেন। অথচ এটা ছিলো ভুয়া একটি বিজ্ঞপ্তি। এই পরীক্ষায় যাদের অংশগ্রহনকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে তারা কেউই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি,তদন্ত কমিটি এমন প্রমান পেয়েছে।
২০১৭ সালের নিয়োগ পরীক্ষার সময় সুরঞ্জন বিশ্বাসকে কাগজে-কলমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দেখানো হয় এবং তিনিই ফারুক হোসেন মাতুব্বরকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সুরঞ্জন বিশ্বাস জানান, তিনি কখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন না। তিনি কাউকে নিয়োগ দেননি,বিষয়টি ভিত্তিহীন। এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারুক মাতুব্বর। তিনি বলেন, সঠিক নিয়মেই অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।