মানবিক আবেদ আলী ও তার জীবনসংগ্রাম

খাগড়াছড়ি দীঘিনালার কবাখালি বাজারে বসবাস রত আবেদ আলী (৬০) নিজে সর্বহারা হয়েও প্রতিদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের খাবার দেন।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরের পর কবাখালী ইউনিয়নের পুরাতন মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায় টিনের চালা ঘেরা, জরাজীর্ণ এক কোণে বিগত ৫-৬ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোঃ আবেদ আলী। কাঠের পাটাতন, পুরনো কাপড় ও পলিথিনের ঠুনকো আশ্রয়ে, ধুলাবালি আর ঝুলে থাকা পোশাকের মাঝে কাটছে তার প্রতিদিন। চারপাশের মলিন পরিবেশ যেন তার জীবনের অবর্ণনীয় কষ্টের নীরব সাক্ষী।
নিজের জীবনের করুন অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে আবেগভরা কণ্ঠে আবেদ আলী বলেন, “দীঘিনালার কবাখালী এলাকায় মাইনী থেকে এসেছি প্রায় ২০ বছর। আমার স্ত্রী অনেক আগে কঠিন রোগে মারা গেছে। বড় ছেলে মারা গেছে, বাকি দুই ছেলে একজন চট্টগ্রামে আরেকজন ঢাকায় থাকে। তারাও গরীব ও কাজ করে খায়। পুত্রবধূদের সাথে মনোমালিন্যের কারণে তাদের সঙ্গে থাকা আর সম্ভব হয়নি।”
তিনি আরও বলেন” শরীরে যখন শক্তি ছিল, সুস্থ ছিল তখন কাজ করে খেতাম কিন্তু শরীল দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষের কাছে থেকে সাহায্য তুলে নিজে খাই এবং এই মানসিক ভারসাম্যহীনদের খাবার দেই। অনেক সময় সাহায্য চেয়েও পাইনা তখন না খেয়ে থাকতে হয় তখন ওদেরকেও খাবার দিতে পারিনা।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আজ যদি আমার একটি মেয়ে থাকত, তাহলে হয়তো একাকী এই কষ্টের জীবন আমাকে দেখতে হতো না। ঝড়-বৃষ্টির রাতে বাতাসে ঠকঠক করে কাঁপি, কখনো ঘুমাতে পারি না। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই।”
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে সরকারি সকল ধরনের সহযোগিতা থেকেও তিনি বঞ্চিত। ন্যূনতম নিরাপত্তা বা সহায়তা ছাড়াই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন এই অসহায় বৃদ্ধ।
তবে দুঃখ-দারিদ্র্য তাকে মানবিকতার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আশেপাশের মানুষের বাসা থেকে সামান্য সাহায্য সংগ্রহ করেও নিজের জন্য খাবার জোগাড় করেন। এবং প্রতিদিন রান্না করে নিজেও খান, পাশাপাশি নিয়মিত কয়েকজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকেও খাবার দিয়ে থাকেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, “আমরা উনাকে অনেক দিন ধরে এখানে বসবাস করতে দেখছি। উনি খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করেন। আমরা ব্যবসায়ী হয়েও একদিন মানসিক ভারসাম্যহীন কাউকে খাওয়াতে পারি না, কিন্তু আবেদ আলী সেটা করেন। তিনি সত্যি একজন বড় মনের মানুষ। যদি তাকে কিছু সাহায্য দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো তিনি একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন।
আবেদ আলীর জীবন আমাদের সামনে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমাজের বিত্তবান ও মানবিক মানুষের কাছে তিনি এক টুকরো সহানুভূতি ও সহযোগিতা পেলে হয়তো আরেকটু ভালভাবে বেচে থাকতে পারবেন।