মুরাদনগরের নিখোঁজ সেই বিজিবি সদস্যের দাফন সম্পন্ন

কুমিল্লার মুরাদনগরে হাজারো মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালবাসায় নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রে উদ্ধার অভিযানের সময় নিখোঁজ হওয়া বিজিবি সদস্য সিপাহী মো. বিল্লাল হাসান।
সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল ১১টায় বিজিবির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে, তার গ্রামের বাড়ি দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর একনজর দেখার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় টেকনাফ উপকূলে রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যায়। বিজিবি দ্রুত উদ্ধার অভিযানে নামে। এতে নারী ও শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও বিজিবির সদস্য সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানসহ আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টার অভিযান শেষে রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকা থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীনে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ফাঁড়িতে সিপাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বাবা বজলুর রহমান, মা ও পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও শোকের মাতম থামেনি।
তার জানাজায় অংশ নেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিজিবি কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধিরা এবং সাধারণ জনগণ। বিজিবির একটি চৌকস দল তার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিপাহী মো. বিল্লাল হাসান দায়িত্ব পালনের সময় জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার আত্মত্যাগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিজিবি কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সিপাহী মো. বিল্লাল হাসান শুধু বিজিবি নয়, পুরো জাতির জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। দায়িত্ব পালনের সময় দেশের সেবায় আত্মত্যাগ করে তিনি দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এলেও, তিনি বীরের মর্যাদায় চিরবিদায় নিয়েছেন। তার আত্মত্যাগ কখনো ভুলবে না দেশবাসী।