মুরাদনগরে পিতার ঘোষণাপত্র: সন্তান নাঈম সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ ইউনিয়নের নগরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মফিজুল ইসলাম তার ঔরষজাত পুত্র মোঃ নাঈম সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও সম্পত্তিগত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বিষয়টি তিনি ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কুমিল্লা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হলফনামা (নম্বর- ৫৫৬/২৪-০৪-২০২৫) দাখিলের মাধ্যমে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান, তার তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মোঃ নাঈম সরকার (১৯) বর্তমানে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। শিশুকাল থেকে তিনি সন্তানটিকে যথেষ্ট আদর-যত্ন এবং স্নেহভরে লালন-পালন করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে তার আচরণে মারাত্মক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
পিতার ভাষ্যমতে, মোঃ নাঈম সরকার মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাসায় গভীর রাতে ফিরে মা-বাবার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, গালিগালাজ এবং এমনকি শারীরিক নির্যাতনের মত ঘটনাও ঘটায়। শুধু তাই নয়, সে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে এমন কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে যা পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সামাজিক পরিমণ্ডলে মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে।
এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে, মোঃ মফিজুল ইসলাম অত্যন্ত দুঃখের সাথে সিদ্ধান্ত নেন তার পুত্রের সাথে যাবতীয় পারিবারিক, সামাজিক, দালিলিক, আর্থিক এবং সম্পত্তিগত সম্পর্ক ছিন্ন করার। তিনি ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেন, তার পক্ষে এ ধরনের সন্তানকে আর মেনে নেয়া সম্ভব নয় এবং ভবিষ্যতে তার কোনো প্রকার দায়-দায়িত্বও বহন করবেন না।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, মোঃ নাঈম সরকার কোনোভাবে তার পিতার বা পরিবারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন না। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে এই কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরপাড় এলাকায় এ ধরনের প্রকাশ্য ঘোষণা বিরল ঘটনা। বিষয়টি গ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকে পিতার দুঃখজনক অভিজ্ঞতার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে মোঃ মফিজুল ইসলাম তার হলফনামা ও ঘোষণাপত্রের অনুলিপি স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ এড়ানো যায়।
এ বিষয়ে পিতা মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন,
“আমি অনেক চেষ্টা করেছি নাঈমকে সঠিক পথে ফেরাতে। কিন্তু তার চলাফেরা, আচার-আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমার পরিবারের ইজ্জত বাঁচাতে এবং মান-সম্মান রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
পুত্র মোঃ নাঈম সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।