শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০১:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ইতিহাসের রক্তচিহ্ন আত্রাইয়ে কালভার্ট ভেঙে চার গ্রামের মানুষের ভোগান্তি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সমঝোতায় বসবেন শেহবাজ-ইমরান ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যার প্রতিবাদে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি পালন চৌহালী উপজেলার ২৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ ভূরুঙ্গামারীতে জমি দখলের চেষ্টা, চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে হামলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতা সাম্য হত্যাপরশুরামে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল পরশুরামের খন্ডল বাজারের ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ইতিহাসের রক্তচিহ্ন

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান প্রতিনিধি:
প্রকাশিত হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ইতিহাসের রক্তচিহ্ন
রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ইতিহাসের রক্তচিহ্ন

যে রাজনীতি একদিন ছিল জাতির মুক্তির অগ্নিস্নান, আজ তা পরিণত হয়েছে ক্ষমতার নিষ্ঠুর বৃত্তে বন্দি এক নিষ্প্রাণ নাট্যশালায়। আদর্শের নামগন্ধ নেই, নীতির কথা বললে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে। অথচ এই ভূখণ্ডের রাজনীতির ভিত্তি রচিত হয়েছিল রক্ত, ত্যাগ আর চেতনায়; যেখানে মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল গভীর দায়বদ্ধতা।

আজকের রাজনীতি যেন এক সুপরিকল্পিত ভুলে যাওয়ার প্রকল্প। ইতিহাসের প্রাচীন দেয়ালে যে মূল্যবোধের শব্দ খোদাই ছিল, সেসব এখন বিবর্ণ—ছিন্নমূল। নেতৃত্ব এখন আর আলো ছড়ায় না, বরং প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে বিভ্রান্তির কুয়াশা। রাজনীতিকদের অধিকাংশই আজ চরিত্রের বদলে চাতুর্যে বিশ্বাসী, আদর্শের বদলে কৌশলে অভ্যস্ত।

অথচ ইসলামী রাজনৈতিক ঐতিহ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যঞ্জনায় গাঁথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাষ্ট্রদর্শনে ছিল জবাবদিহিতা, দয়া ও সুবিচারের নিখাদ দৃষ্টান্ত। সেখানে শাসক ছিলেন দাসের মতো সেবক, আর শাসিতরা ছিলেন তার দায়িত্বের অঙ্গ। খলিফা ওমর (রা.) বলেছিলেন, “ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি ক্ষুধায় মারা যায়, তার হিসাব ওমরকে দিতে হবে।” এমন কথার ভার কি আজকের কোনো শাসক ধারণ করেন?

ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, রাজনীতি যদি জনগণের পাশে না দাঁড়ায়, তবে তা এক সময় জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। যে রাজনীতি মানুষকে একতাবদ্ধ করার বদলে বিদ্বেষ ছড়ায়, যে রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজনের জন্য, সে রাজনীতি পবিত্র নয়—তা আত্মঘাতী।

আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতিকে এক গভীর চিন্তার জায়গা হিসেবে দেখেছে। বঙ্কিম থেকে শুরু করে কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু থেকে শহীদুল্লাহ কায়সার—সাহিত্যিকেরা রাজনীতির সৌন্দর্য ও দায়িত্বের কথা বলে গেছেন। কিন্তু আজকের কালে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে সাহিত্য যেন বিব্রত, ভীত, নির্বাক। কারণ কলম আজ চাপে, মত আজ নিয়ন্ত্রিত, আর চিন্তা আজ বিক্রয়যোগ্য পণ্যে রূপ নিয়েছে।

তারপরও আশার প্রদীপ নিভে যায়নি। সময়ের এক ফাঁকে জন্ম নেয় প্রতিরোধ, জন্ম নেয় নতুন চিন্তা। সেই চিন্তাই ইতিহাসকে পুনরায় জাগিয়ে তোলে, মানুষের ভেতরকার অন্ধকার ভেদ করে আলোর খোঁজে পাঠায়।

আমাদের প্রয়োজন এমন এক রাজনীতি, যা কেবল দখলের নয়, দায়িত্বের। যেখানে নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়, সেবা। যেখানে বিরোধিতা মানে শত্রুতা নয়, ভিন্নমতের সৌন্দর্য। যেখানে ধর্ম ব্যবহৃত হয় অনুপ্রেরণার জন্য, নিপীড়নের জন্য নয়।

সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় কিছুদিন, ইতিহাসকে চাপা দেওয়া যায় কিছু পৃষ্ঠায়—কিন্তু সময় একদিন সত্যকে ফিরিয়ে আনে। তখন মুখোশ খুলে পড়ে পড়ে; রাজনীতির মুখ দেখায় রক্তমাখা আয়না। সেই আয়নায় প্রতিফলিত হয় এক জাতির কান্না, আর ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।

আমরা কি সেই দিনটির জন্য প্রস্তুত?

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর