রাজৈরে পুলিশের গাড়িতে হামলা ভাঙচুর এস,আই সহ আহত দুই জন।

রোববার (১৩ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে রাজৈর উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রাজৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা ও ড্রাইভার শাহাবুদ্দিন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা পোস্টের সাংবাদিকের মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে ২ দিন যাবৎ বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। এ সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। রোববার রাতে চতুর্থ ধাপের সংঘর্ষ শেষে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিটিং করছিল মজুমদার কান্দি গ্রামের লোকজন। খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশের দুটি গাড়ির ওপর ইটপাটকেল নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যপক ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এ ঘটনায় রাজৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা ও পুলিশের গাড়ির ড্রাইভার শাহাবুদ্দিনের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এসময় এসআই মোস্তফা ও ড্রাইভার শাহাবুদ্দিনের মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে হামলাকারীরা। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঈদ পরবর্তী সময় গত ২ এপ্রিল রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের ফুচকা ব্রিজ এলাকায় বাজি ফাটায় বদরপাশা গ্রামের আতিয়ার আকনের ছেলে জুনায়েদ আকন ও তার বন্ধুরা। এসময় ওই গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের ছেলে জোবায়ের খান ও তার বন্ধুরা মিলে তাদের বাঁধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে গত ৩ এপ্রিল সকালে রাজৈর বেপারিপাড়া মোড়ে জোবায়েরকে একা পেয়ে পিটিয়ে তার ডান পা ভেঙে দেয় জুনায়েদ ও তার লোকজন। পরে আহত জোবায়েরের বড় ভাই অনিক খান (৩১) বাদী হয়ে জুনায়েদকে প্রধান করে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে রাজৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসে ওঠে উভয় গ্রামের লোকজন। এক পর্যায়ে শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে দুই গ্রাম পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় ব্যপক ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ঘণ্টাব্যাপী প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে দুই ওসি ও অন্তত ১০ পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়।
পরে রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে দুই পক্ষের লোকজনকে ডাকলে তারা মিমাংসার জন্য রাজি হয়। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার সময় শালিস মিমাংসার জন্য বসার কথা ছিল। এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে আবারো দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় বদরপাশা গ্রামের লোকজন বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও দোকানের অগ্নিসংযোগ করে। ১২টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে বদরপাশা গ্রামের বিক্ষুব্ধরা। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে রাজৈর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ঘটনাস্থালে র্যাব মোতায়েন করা হয়।