শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ট্রেন থামিয়ে ট্রেন থেকে তেল চুরি, চালকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা আগামীকালের ‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশ নিতে হেফাজতের আহ্বান ট্রেন থামিয়ে ট্রেন থেকে তেল চুরি, চালকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা ফুলবাড়িয়া ইজারাপাড়া হাফেজিয়া মাদরাসার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাদারীপুরে প্রবীণ শিক্ষক সাদা মনের মানুষ আঃ বারেক আকন মাষ্টার চিরনিদ্রায় শায়িত ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে আখাউড়ায়সাংবাদিকদের মানববন্ধন ঈশ্বরগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ পৌর কর আদায় আশুগঞ্জে সাংবাদিকের উপরহামলা, মামলা দায়ের আন্দোলনে বিজয়ের দিন শহীদ হন হতভাগা হাসিবুর আত্রাইয়ে কৃষকদের বিনামূল্যে প্রনোদনার সার-বীজ বিতরণ

শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী উড়াল সড়ক

শাহ আলী জয়
প্রকাশিত হয়েছে : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশ পর্যন্ত খুলে দেয়া হচ্ছে ২ সেপ্টেম্বর।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২ সেপ্টেম্বর। নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের জন্য নেয়া এই প্রকল্পের সেবা গ্রহণে নগরবাসীও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। প্রাথমিকভাবে উড়াল সড়কটির শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ পর্যন্ত খুলে দেয়া হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড়াল সড়কটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হলে নগরবাসী এর সুফল সেভাবে পাবে না। টোল দিয়ে খণ্ডিত অংশে চলাচলে তাদের আগ্রহ ততটা না-ও মিলতে পারে। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি শেষ করে পুরো সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ জুন বনানীর সেতু ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণ সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কের কাজ প্রায় শেষ। উদ্বোধন সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে করা হচ্ছে রংয়ের কাজ। শেষ হয়েছে সড়কচিহ্ন দেয়ার কাজও। বসে গেছে সড়ক বিভাজকের ওপর বিদ্যুতের খুঁটি। রাতে এসব বাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষাও করা হচ্ছে।

দুটি র‌্যাম্পের কাজ এখনও চলমান। তবে শ্রমিক-প্রকৌশলীদের এখন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে তেজগাঁও থেকে মগবাজার রেলগেট এলাকায়। এই এলাকায় কোথাও চলছে পাইলিংয়ের কাজ কোথাও চলছে পিলার নির্মাণ কাজ। সব মিলিয়েই এই এলাকায় চলছে এক মহাযজ্ঞ।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল মহাসড়ক নির্মাণে নেয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিবরচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া, নকশায় জটিলতা ও অর্থায়নের অভাবে এর নির্মাণ কাজে কেটে গেচে এক যুগের বেশি সময়। এ কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সরকারের অন্যতম ধীরগতির প্রকল্পের তকমা পায়। তবে কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটির বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজে গতি পেয়েছে কয়েক গুণ।

পূর্ণাঙ্গ এক্সপ্রেসওয়েটি হবে ফার্মগেট, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই অংশের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। আর ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে দেয়া হবে সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ।

টোল নির্ধারণ

এদিকে সোমবার (২১ আগস্ট) সেতু বিভাগের উপ-সচিব আবুল হাসানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) টোল ১৬০ টাকা। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ টাকা। আর বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে টোল ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। এ টাকার মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যে অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে তার মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। তবে র‌্যাম্পসহ তা দাঁড়বে ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই অংশে মোট ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে ১৩টি র‌্যাযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এতে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট।

প্রকল্পের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিক প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তবে র‌্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন প্রতিষ্ঠান

২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তির পর ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সংশোধিত চুক্তি সই হয়।

থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ অংশীদারত্বে নির্মাণ এটি হচ্ছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩০ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। তবে উদ্বোধন হতে যাওয়া অংশের কাজ হয়েছে ৯৮ শতাংশ। উদ্বোধন অংশে র‌্যাম্প রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে বিমানবন্দর এলাকায় দুটি, কুড়িলে তিন, বনানীতে চার, মহাখালীতে তিন, বিজয় সরণিতে দুই ও ফার্মগেট এলাকায় একটি। তবে শুরুতে সব র‌্যাম্পে চলাচলের সুযোগ থাকছে না।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রকল্পের নির্মাণ কাজ হচ্ছে তিন অংশে। প্রথম ধাপের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ দ্বিতীয় ধাপের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ এবং তৃতীয় ধাপের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। মূল পথ ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য পথ থাকবে ৩১টি। এই ওঠানামার র‌্যাম্পসহ সর্বমোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

বিশেষজ্ঞ মত

প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন এবং এর সুফল ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটি হলো পুরো ঢাকা শহরকে বাইপাস করার প্রকল্প। সুতরাং পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে তার মূল্যায়ন করাটা ঠিক হবে না। যতটুকু উদ্বোধন হবে সেটা ফার্মগেট ও মোহাম্মাদপুর এলাকার মানুষের জন্য কিছুটা বিকল্প চলাচল ব্যবস্থা হতে পারে। তারপরও সব সময় মানুষ এটা ব্যবহার করবে না।

‘মানুষ এখনই টোল দিয়ে এই যোগাযোগ মাধ্যম কেন ব্যবহার করবে- এটা একটা প্রশ্ন। পিক আওয়ারে হয়তো কিছু মানুষ এটা ব্যবহার করবে। কিন্তু পিক আওয়ারের বাইরে তো নিচের প্রধান সড়কই অনেকটা ফাঁকা থাকে। তখন মানুষ ফাঁকা সড়ক রেখে টোল দিয়ে কেন এই ছোট দূরত্বের উড়াল সড়ক ব্যবহার করবে?’

ড. শামসুল হক বলেন, ‘উড়াল সড়কটি যখন পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হবে তখন এর একটা বিশাল সুবিধা মানুষ পাবে। তখন মানুষ অল্প সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে শহরকে বাইপাস করতে উড়াল সড়কটি ব্যবহার করবে বলে আমি মনে করি।’

প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য

সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না সেটাই ধরে নেয়া যায়। অবশ্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজ বলা যায় পুরোপুরি শেষ। এখন শুধু আমরা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি। বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশে দুটি র‌্যাম্পের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই এই কাজটিও সম্পন্ন করতে পারব।

‘এছাড়া আমরা এখন জোর দিচ্ছি আমাদের প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশের (তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী) কাজে। আশা করছি সেটিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর