শেরপুরে কৃষি প্রনোদনার প্রকল্পের টাকা হরিলুট,প্রকল্পের ৭০ ভাগ টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে। তদন্ত কমিটি গঠন!!

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ অর্থ বৎসরের কৃষি প্রনোদনা সমলয় প্রদর্শনী প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকতা ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক কৃষক।এ বিষয়ে জানতে ৪ সদস্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়েও এসব অনিয়মের সত্যতাও পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রকল্পের বরাদ্দের ৭০ ভাগ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রনোদনা আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ে অসচ্ছল কৃষকদের অর্ন্তভুক্তির নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি কোন কিছুই।খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১ একর করে মোট ৫০ জন কৃষক নেওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পে সচ্ছল কৃষকদের কে স্থান দিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে কোন কোন কৃষককে ২ একর থেকে ৫ একর পর্যন্ত প্রণোদনার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার এই কৃষি প্রনাদনায় বীজতলার সাড়ে চার হাজার ট্রে না কিনেই অভিনব পদ্ধতিতে একটি খাত থেকেই লুটপাট করা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বীজ ,সার সহ অন্যান্য খাত থেকে প্রকল্পের ৭০ ভাগ টাকাই হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঝিনাইগাতী কৃষি পূর্ণবাসনের সহায়তায় রবি মৌসমে বোরো ধানের (উফশি) জাত সমলয়ের চাষাবাদের মাধ্যমে ব্লক করতে প্রদর্শনীর চাষাবাদের জন্য ৫০ একর জমি ৫০ জন কৃষকের মাধ্যমে বাস্তবাযনের জন্য ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।প্রকল্প অনুযায়ী ঝিনাইগাতী উপজেলায় প্রতিটি প্রদর্শনী প্লটের পরিমাণ নির্ধারণ এক একর (একশ শতক) করা হয়। প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় ২৭,৩৭৬ টাকা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ সাধারণ কৃষক প্রকল্পটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। চারা উৎপাদনে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় সাড়ে চার হাজার নতুুন ট্রে কেনার কথা থাকলেও ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে বিল উঠিয়ে নেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। ট্রে না কিনে ২০২২-২৩ অর্থ বৎসরের পুরাতন সমলয় প্রনোদনার ব্যবহার করা ট্রে তে বীজ লাগিয়ে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মামুনের যোগসাজেশে মোট ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পুরোটাই পকেটে পুরেছে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন ।
প্রণোদনায় উফশি জাতের ধান চাষ ৯২ করার কথা থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করা হয়। মেশিনে চারা রোপনের কথা থাকলেও সনাতনি পদ্ধতিতে হাত দিয়ে চারা রোপন করা হয়। এর জন্য কৃষককে দেয়া হয়নি কোন খরচ।স্থানীয় দুপুরিয়া গ্রামের কৃষক আলমগীর যিনি দুই একর জমি প্রণোদনার আওতায় চাষাবাদ করেছেন তিনি জানান, দুই একর জমির জন্য বীজ বাবদ প্রতি কেজি ছয়শত টাকা হারে ৪ হজার ৮ শত টাকা তুলে দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তার হাতে এবং সনাতন পদ্ধতিতে ক্ষেত লাগালেও কোন খরচ দেওয়া হয়নি তাকে। এক একর করে ৫০ জন কৃষককে প্রনোদনার আওতায় না এনে নিয়ম বহির্ভূত একজনকে পাচঁ একরের উপর সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষক জুলহাস মিয়া।এ ছাড়া পুরাতন ট্রে ২০২২ -২৩ অর্থবছরে ধানশাইল ইউনিয়নের সমলয় প্রণোদনার উপকারভোগী কৃষক জাকিরুল মিয়া জানান, দুই বছর আগে আমাদের ৫০ জন কৃষকের মধ্যে সমলয়ের যে ট্রেগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল সেই ট্রেগুলি আমার বাড়িতেই ছিল উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মামুন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কথা বলে এ বছর দুপুরিয়ায় যে সমলয় প্রকল্প করা হয়েছে আমার বাড়ি থেকে সাড়ে তিন হাজার ট্রে ওখানে নিয়ে যায়। এ বাবদ আমাকে কোন টাকা পয়সা দেওয়া হয়নি।
অভিযুক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন স্বীকার করেন পুরাতন ট্রে ব্যবহার করার কথা তবে তিনি দোষ চাপালেন ঠিকাদার ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার উপর।পুরাতন ট্রেতে কেন বীজ রোপন করা হলো এবং ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর ব্যাপারে তিনি অস্বীকার করেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম রাসেল জানালেন, তদন্ত টিম কাজ করছে প্রতিবেদন পাওয়া মাত্র আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, জানালেন যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে , তদন্ত রির্পোট পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।