সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় হিন্দু মহাজোটের পাঁচ দফা দাবি

বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করার পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
শুক্রবার (২২ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক বৈঠকে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের এই নেতা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার কথিত মিথ্যা অজুহাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বারবার ঘটে চলা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও লাঞ্ছনার ঘটনা ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন, বহুত্ববাদী ও সহনশীলতা চর্চার অভাব দেশে একটি অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করছে।
বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির এই পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনো ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারও নেই, তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর, খুন ও নির্যাতন করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় হামলা বেড়েই চলেছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কক্সবাজারের রামু থেকে নড়াইলের সাম্প্রদায়িক হামলা পর্যন্ত একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি। সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। প্রতিটি ঘটনা পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই ঘটছে। এ সময় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি। দাবিগুলো হলো-
১. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
২. ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধ করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার সব মামলার দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধী কারা জড়িত তা উদঘাটনে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন ছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভুক্তভোগীদের সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদান করা।
৪. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা।
এ দিন গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. শ্রীমতি সোনালী দাস।