সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্পিডবোট দুর্ঘটনা: ২৭ যাত্রী নিয়ে ফাটল , প্রাণে বাঁচলেন সবাই।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সন্দ্বীপগামী একটি স্পিডবোট ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে সন্দ্বীপ চ্যানেলে এ ঘটনা ঘটে। বোটটিতে থাকা ২৭ যাত্রী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনার বর্ণনা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
দুপুরে কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস পরিচালিত একটি স্পিডবোট গুপ্তছাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর, প্রায় এক কিলোমিটার অগ্রসর হলে হঠাৎ করে স্পিডবোটটির তলায় ফাটল ধরে এবং দ্রুতগতিতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তাল সাগরে মৃত্যুর প্রহর গোনা
যাত্রীরা জানান, পানির তোড়ে বোটটি দুলতে থাকে এবং যেকোনো সময় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পরিস্থিতি খারাপ হলে চালক বোটটি উপকূলের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং সবচেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে—ইন্ধন (তেল) ফুরিয়ে যাওয়ায় বোটটি মাঝপথে থেমে পড়ে। এরপর চালক ও যাত্রীরা কোনওরকমে বোটটি বাঁশবাড়িয়ার সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে নিয়ে আসেন।
ঘটনাস্থলে থাকা যাত্রী ফুহাদ বলেন,
বোটে আমরা ২৭ জন ছিলাম, তার মধ্যে তিনজন শিশু। হঠাৎ করে দেখি পানিতে তল ভাসছে। তখন আমরা সবাই চিৎকার করছি। চালক জানান, তেলও শেষ হয়ে গেছে। মালিকপক্ষকে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করছে না। তখন আমরা আল্লাহকে ডাকছি, যেন শেষ রক্ষা হয়।
যাত্রীরা কী বলছেন?
ভুক্তভোগীরা স্পষ্টভাবে অভিযোগ করছেন যে, এ দুর্ঘটনার পেছনে স্পিডবোট কোম্পানির গাফিলতি ও নজরদারির অভাব দায়ী। অনেকেই জানান, নৌযানগুলোর নিয়মিত পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বারবার এমন ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য
সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার বলেন,
তেল ফুরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আসলে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বোট চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। যাত্রীদের নিরাপদে নামাতে গিয়ে আমাদের বোটের বাম্পারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সন্দ্বীপবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই অঞ্চলে নৌযাত্রা যেন এক ভয়াবহ রুলেট খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিদিন মানুষ মৃত্যুর মুখে পড়ছে।”