জেলা পরিষদ নির্বাচন-বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর চাপে আওয়ামী লীগ

আসন্ন ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিপুলসংখ্যক দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর চাপে পড়েছে আওয়ামী লীগ। সাড়ে তিন শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে দলের প্রবীণ নেতাদেরই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কালের কণ্ঠকে এমনটা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য।
মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, প্রতি জেলায়ই পাঁচ থেকে সাতজন করে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা অনেকেই ঢাকায় এসে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, জেলা পরিষদে সাধারণত সংশ্লিষ্ট জেলার প্রবীণ নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। জেলার যাঁরা পুরনো, ত্যাগী নেতা আছেন তাঁরাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন। তবে মনোনয়নের বিষয়ে জেলা কমিটির মতামত গুরুত্ব পায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিনই বিকেলে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এসে ভিড় করছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেন সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিমল দাস। আগের দিন একই জেলা পরিষদের দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী—জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম হোসেন আলী এবং সাবেক সহসভাপতি আবু ইউসুফ সূর্যও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আমাদের পাবনা জেলা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। এঁরা হলেন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউর রহিম লাল, সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন, সাবেক উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি আ স ম আব্দুর রহিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন পিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদ আলী বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সরদার মিঠু আহমেদ।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) আবু তাহের, পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুক, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের বড় ছেলে এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এ বি এম খোরশেদ আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা অর্থবিষয়ক সম্পাদক আলী আকবর।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাত মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে আছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক চৌধুরী এমদাদুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, দুই সহসভাপতি শেখ মো. রুহুল আমিন ও সিকদার নূর মোহাম্মদ দুলু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ লুত্ফর রহমান বাচ্চু, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী লেকু।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে আছেন। এঁরা হলেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান, জেলা পরিষদের সদ্যোবিদায়ি প্যানেল চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহম্মেদ সালেক, নলছিটি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জি কে মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের সদ্যোবিদায়ি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ফায়জুর রব আজাদ।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় আওয়ামী লীগের ছয়জন প্রার্থী মাঠে আছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান প্রশাসক মো. শাহজাহান, জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল।
মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, এমন অনেক নেতা আছেন যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দল করছেন কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে তাঁদের সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী করা যায়নি। এসব বঞ্চিত নেতাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করার মধ্য দিয়ে তাঁদের সম্মানিত করতে চায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের দল তো অনেক বড়, প্রার্থীও অনেক। অনেকেই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন। প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, দলের জন্য ত্যাগ, সততা—এগুলো মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। ’
আগামীকাল থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু
আগামীকাল রবিবার থেকে মনোনয়ন আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হবে, চলবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে এবং কোনো প্রকার অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা প্রদান করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর, বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। আপিল ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর।
মনোনয়ন বোর্ডের সভা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রবিবার ভারত সফরে যাবেন। সেখান থেকে ফিরবেন ৮ সেপ্টেম্বর। এরপর যেকোনো দিন স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন বোর্ডের সদস্যরা। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, আগামী ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসবে। ’