উপকূলে দিন বদলালেও বদলায়নি নারীদের মজুরি বৈষম্য

সর্ব দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চল কয়রায় বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুর নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকে রয়েছে বিস্তর বৈষম্য। বেঁচে থাকার তাগিদে নারী ও পুরুষ হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও নারী তার ন্যায্য পাওনা পায় না। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কয়রা উপজেলার মুন্ডা ও আদিবাসী নারী শ্রমিক।
এ সকল নারীদের অভিযোগ, পুরুষের পাশাপাশি খেত খামারে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করি। অথচ পুরুষ শ্রমিক ছয়শ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও আমরা পাই তিনশ টাকা। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনসহ নানা বৈষম্যের স্বীকার হন এ সকল নারী।
একাধিক নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, মাটি কাটা ছাড়া সব কাজে তারা পুরুষের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলেন। অথচ মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তাদের প্রতি বেলা একশ/দেড়শ টাকা কম দেওয়া হয়। অনেক সময় কম মজুরিতে পুরুষরা কাজ করতে সম্মত না হওয়ায় অর্ধেক মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় বলে জানান তারা।
উপজেলার মুন্ডাপাড়া নারী শ্রমিক জয়ন্তী রানী বলেন, পুরুষের সাথে মাটি কাটি, কাঁধে ও মাথায় বোঝা বহন করি। জমি চাষ, ধান রোপণ, কাটা ও মাড়াই করি। তবুও রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনশেষে পুরুষের চেয়ে আমাদের মজুরি নিতান্তই কম।
মুন্ডা সংগঠক নিরাপদ মণ্ডল জানান, উপজেলায় দেড় হাজার মুন্ডা ও আদিবাসী নারী শ্রমিক কৃষি কাজে সাফল্যও রাখছে। কিন্তু পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি মারাত্মক বৈষম্য করা হয়।
সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খয়রুল আলম বলেন, নারী শ্রমিকের জন্য স্থানীয়ভাবে কোনো সংগঠন গড়ে না ওঠায় তাদের মজুরি বৈষম্য দূর হচ্ছে না। নারী শ্রমিকরা সংগঠিত না হওয়ার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় মহাজনরা ইচ্ছামত মজুরিতে তাদের কাজ করতে বাধ্য করে।
নারী শ্রমিকের মজুরি বৈষম্য নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে সবাই কাজের জন্য ঘুরছেন। এ সুযোগে নিয়ে স্থানীয়রা নারীদের দিয়ে পুরুষের কাজ করিয়ে তুলনা মূলক কম মজুরি পরিশোধ করছেন। নারী শ্রমিকের প্রতি মজুরি বৈষম্যের অবসানে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খাতুন বলেন, সরকার নারীদের ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন। একজন শ্রমিক হিসেবে নারীদেরকেও সমান মজুরি দেওয়া উচিৎ। তাদের সচেতন করার পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীদের স্বার্থে একটি সংগঠন জরুরি।