তাড়াশে বছরের শুরুতে তিন ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খনন-নীরব প্রশাসন

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বর্ষার পানি না নামতেই শুরু হয়েছে পুকুর খনন। দেখার যেন কেউ নেই। ফলে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি, সেই সাথে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এ দিকে পুকুর খননের কাদামাটি আঞ্চলিক ও মহাসড়কের ওপর দিয়ে বহন করায় সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
গত কয়েক বছর যাবৎ ফসলি জমিতে পুকুুর কাটার ফলে উপজেলার মাধবপুর, শ্রীকৃষ্টপুর, বোয়ালিয়া তাড়াশ, কোহিত, ঘরগ্রাম, মঙ্গলবাড়িয়াসহ নিচু এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। খাল, ব্রিজ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ফেলায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পুকুর খনন করায় ফসলি জমির মাঠ থেকে বর্ষার পানি সময় মতো নামতে না পারায় রবিশস্য চাষ করতে পারেনি কৃষকরা।
বিলম্বিত হচ্ছে ইরি-বোরো আবাদ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে ২০ ২২ সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৮৫০ টি পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুর খননের ফলে ৬২০ হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ভেকু মালিক সুত্রে জানা গেছে,চলতি বছরে এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন করা হবে।
জানা গেছে, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের আবাদি জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। যেখানে কৃষকেরা ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার লাভ করে থাকে, সেখানে পুকুর কাটলে প্রতি বিঘায় বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি পায়। তাই বেশি মুনাফার লোভে কৃষকরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পুকুর খনন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের ও কুন্দাশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বিএসসি প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেকুর ঠিকাদার বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিবে। আর আমরা বিভিন্ন দফতর ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করি। তাই পুকুর খননে কোনো সমস্যা হয় নাই।
উল্লেখ্য গত বছর এই তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার অপরাধে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ ওবায়দুল্লাহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেই সঙ্গে পুকুর কাটা বন্ধ করে দেন।
অথচ কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে এ বছর আবার পুকুর খনন চলছে।
পুকুর খননের বিষয়ে তালম ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ খান জানান, পুকুর না কাটার জন্য স্কুল শিক্ষক আব্দুর রশিদকে নিষেধ করা হয়েছে।তার পর ও তিনি আদেশ অমান্য করে পুকুর খনন করছেন। বিষয়টি উপজেলা কমকর্তা স্যার লিখিত ভাবে জানানো হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, ‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ মেজবাউল করিম জানান, পুকুর খনন বন্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন রাজস্ব ,বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।