বেরোবিতে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা মিললো বিরল মাধবীলতা

উত্তরবঙ্গের বাতিঘর খ্যাত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ মাধবীলতা ফুল ফুটেছে। দেশে বর্তমানে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি স্থানে মাধবীলতা গাছ রয়েছে।
শনিবার (১ মার্চ) সকালে মাধবীলতা গাছে ফুলের দেখা মেলে রংপুর নগরীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মামুদ ভবনের সামনে একটি পাকর গাছের সাথে আলিঙ্গন করে আছে বিরল এই মাধবীলতা গাছ।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, মাধবীলতা এখন বাংলাদেশে একটি বিরল প্রজাতির ফুল হয়ে উঠেতেছে, সহসা দেখা যায় না। আমরা বর্তমানে মাধবীলতা বলে এখন সাধারণত যেটাকে চিনি সেটা আসল মাধবীলতা নয়। এটাই আসল মাধবীলতা ফুল। ছোট ছোট কিছু প্রাপ্তির আনন্দ অনেক বড়। এই যেমন আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ফুলের প্রথম আগমনে যে আনন্দ তা বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। গত ২০২১ সালের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো মাধবীলতা ফুল ফুটেছিল, এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো ফুটেছে যা অত্যন্ত আনন্দের।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মাধবীলতা গাছের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। মাধবীলতার নরম সবুজ লতা আর ছোট্ট সাদা-লাল ফুলগুলো যেন প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। ক্লাসের ব্যস্ততা আর পড়াশোনার চাপের মাঝে এই গাছের সৌন্দর্য আমাকে প্রশান্তি দেয়। মাধবীলতার মিষ্টি সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা মনকে হালকা করে তোলে। কখনো এর নিচে দাঁড়িয়ে আমি প্রকৃতির স্নিগ্ধতা অনুভব করি, কখনো বা বন্ধুরা মিলে এর ছায়ায় বসে গল্প করি। এই গাছ শুধু ক্যাম্পাসের শোভা বাড়ায় না, বরং এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিও দেয়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আমাকে নতুন উদ্যমে পথ চলার অনুপ্রেরণা জোগায়।
মাধবীলতা গাছের ফুল সম্পর্কে জানা গেছে, ফুল সাদা রঙের, পাঁচটি পাপড়ি এবং তার মধ্যে পঞ্চম পাপড়ির গোড়ার দিক হলদেটে। ফুল দেখতে তিল ফুলের মতো এবং খুব সুগন্ধযুক্ত। বসন্ত ও গ্রীষ্ম এ ফুলের ঋতু হলেও কখনো কখনো বর্ষা পর্যন্ত ফোটে। ফুল থেকে ফল হয়। এ লতা গাছটি এখন দুষ্প্রাপ্য।মাধবীলতা গাছ বৃক্ষারোহী লতা এবং দীর্ঘজীবী। ডাল ছোট ছোট এবং ঝোপঝাড় হয়ে যায়। বহুবর্ষী হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়। ডাল দু-তিন বছর পরপর কেটে দিতে হয়। এর লতা যতই বাড়তে থাকে ততই নতুন নতুন ডালপালা গজায় এবং বেশি করে ফুল ফোটে। এর মোটা ডালের ছাল মেটে রঙের, ভেতরের কাঠ লালচে ও শক্ত। পাতা বিপরীতমুখী, আয়তাকার, বোঁটার দিক থেকে আগা ক্রমে সরু। সাধারণত ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। অনেকটা চাঁপা ফুলের পাতার মতো। বাগানের শোভার জন্য যত্ন করে মাধবীলতা গাছ লাগানো হয়। তবে দুষ্প্রাপ্য মাধবীতলা অযত্ন-অবহেলায় বীজ থেকে চারা হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।
মাধবীর ফুল গুচ্ছবদ্ধ ও বিন্যাস সুসংবদ্ধ। মুকুলগুলো সূক্ষ্ম রোমে ভরা। ফুল সাদা রঙের, পাঁচটি পাপড়ি এবং তার মধ্যে পঞ্চম পাপড়িটির গোড়ার দিক হলদেটে। ফুল দেখতে তিল ফুলের মতো এবং খুব সুগন্ধি। বসন্ত ও গ্রীষ্ম এই ফুলের ঋতু হলেও কখনো কখনো বর্ষা পর্যন্ত ফোটে। ফুল থেকে ফল হয়, বীজ থাকে ২/৩টি এবং তা রোমশ। মাধবী অযত্নেও বাড়ে, বীজ থেকে চারা হয়, ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেও চারা পাওয়া যায়। মাধবীর পাতা গরু-ছাগলে খায়।
এছাড়াও এর অপরীসিম গুনাগুণের মধ্যে রয়েছে পুরানা বাত সারাতে মাধবীলতার পাতার রস উপকারী। হাঁপানির শ্বাসকষ্টের জন্য পাতা ও ডালের রস উপকারী। মাধবীলতার শুকনো ছালের গুঁড়ো বিষাক্ত ঘায়ের সারিয়ে তোলে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বার মতো মাধবীলতা ফুটেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বিশেষ করে প্রশাসনিক ভবনের উভয় পাশ, কৃষ্ণচূড়া সড়ক ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ গেইট সংলগ্ন দেবদারু সড়ক, আবাসিক হলের পাশে ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে ফুলের বাগান করা হচ্ছে।
এ সব বাগানে ফুটেছে নানান প্রজাতির ফুল। গাঁদা,জাম্বু গাঁদা,ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ভাররবিনা, দেশি সিলভিয়া,হাইব্রিড গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ড্যামথাস, ডালিয়া, গোলাপ, মোরগ ঝুঁটি, সূর্যমুখীসহ নানা প্রজাতির ফুল।