মুরাদনগরে উৎসবের আবহে বৈশাখ উদযাপনে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা

বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। নানা রঙে রাঙানো মুখরিত এই শোভাযাত্রা এবং দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ভরে ওঠে পুরো উপজেলা সদরের পরিবেশ।
সোমবার (১লা বৈশাখ) সকাল ৯টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা ঘুরে বেড়ায় মুরাদনগরের প্রধান প্রধান সড়ক। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ।
শোভাযাত্রায় বিভিন্ন রকম মুখোশ, পাপেট, পোস্টার, ঐতিহ্যবাহী প্রতীক, বাদ্যযন্ত্র ও বাংলা সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ বহন করে অংশগ্রহণকারীরা। তারা গান, বাদ্য-বাজনা ও স্লোগানে মুখর করে তোলে পুরো পরিবেশ। এ যেন এক রঙের উৎসব, সংস্কৃতির জয়গান।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এ বছর থেকে ঐতিহ্যবাহী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে শোভাযাত্রার নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। নাম পরিবর্তন নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করলেও, উৎসবের আমেজ ও মানুষের অংশগ্রহণে কোনো ঘাটতি ছিল না।
শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা খেলা। দিনভর চলে গান, কবিতা, নৃত্য, নাটকসহ নানা পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করেন লোকসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাছান খাঁন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এ সময় ইউএনও মো. আবদুর রহমান বলেন, “বৈশাখ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতীক। এই ধরনের আয়োজনে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উৎসবকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
বৈশাখী খাবারের বিশেষ আয়োজন ছিল অনেক দোকানে। পান্তা-ইলিশ, খিচুড়ি, গরুর মাংস, রকমারি পিঠা আর ঘরোয়া পরিবেশে বিভিন্ন পরিবার ও সংগঠন নিজেদের মতো করে দিনটি উদযাপন করে।
বৈশাখ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও স্থানীয়ভাবে নানা আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খবর পাওয়া গেছে।
পহেলা বৈশাখের এই প্রাণবন্ত আয়োজন যেন প্রমাণ করে, শত রকমের ব্যস্ততা আর মতভেদ ভুলে বাঙালি সবসময় উৎসবপ্রিয়—সংস্কৃতির টানে সবাই একতাবদ্ধ।