রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিবগঞ্জে মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ চুনারুঘাট উপজেলায় দিনেদুপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা কোটি টাকার ইয়াবা লুট করেছে কক্সবাজারে,নৈপথ্যে ছদ্মবেশী রবিউল! আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহীদ মুজাহিদের মা-বাবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করবে : প্রধান উপদেষ্টা বাজার পরিষ্কার পরিছন্নতা ও ড্রেনের কাজ চলমান মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে গেছে ৬ মাসের শিশু বাচ্চা স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় হাজির স্বামী: পুটি মাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল মৌসুমীর

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহীদ মুজাহিদের মা-বাবা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহীদ মুজাহিদের মা-বাবা
শহীদ মুজাহিদ, ছবি : বাসস

রিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ঘাতক বুলেটে নিহত মুজাহিদের (১৭) বাবা-মা। অভাব-অনটনের সংসারে এখন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে পরিবারটি।

শহীদ মুজাহিদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর থানাধীন গপ্তেরগাথি গ্রামে। মুজাহিদ নানার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানাধীন শ্রীপুর গ্রামের শ্রীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে।

মুজাহিদের বাবার নাম সাহাবুদ্দিন মল্লিক (৫০) একজন দিনমজুর। মা সারমিন বেগম (৪০) গৃহিণী। মোফাচ্ছের মল্লিক নামের ছোট একটি ভাই রয়েছে যে গ্রামের বাড়িতে আলিয়া মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। বর্তমানে তারা সাভার পৌর এলাকার সোবাহানবাগ মহল্লায় একটি ভাড়া রুমে বসবাস করছে।

অভাব অটননের সংসারে করোনাকালে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ে সাহাবু্িদ্দন মল্লিক। পরিবারের এমন অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ‘ভাই ভাই ফার্নিচার’ নামের একটি ফার্নিচারের দোকানে কাঠ মিস্ত্রির কাজ শুরু করে মুজাহিদ।

সেই থেকে জীবন সংগ্রাম শুরু মুজাহিদের। বাবা সাহাবুদ্দিনের কাজ নেই, মা অসুস্থ- এমন অবস্থায় মুজাহিদই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসার খরচের পাশাপাশি বাবার হাত খরচ, মায়ের ওষধ আর ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ সবই চলতো মুজাহিদের আয়ে। এভাবেই চলছিল তাদের পরিবার।

৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হঠাৎই ঘাতকের বুলেটে নিস্তব্দ হয়ে যায় সবকিছু। ধুলিসাৎ হয়ে যায় সব স্বপ্ন। এলোমেলো হয়ে যায় পুরো পরিবারটি। এরই মধ্যে যৎসামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা পেলেও বর্তমানে কোনোরকমে খেয়ে পড়ে জীবন কাটছে তাদের।

শহীদ মুজাহিদের বাবা সাহাবুদ্দিন মল্লিক বাসসকে বলেন, আমি বেশি কাজ করতে পারি না। তাছাড়া এখন দিন মজুরদের কাজও কম। তাই একবেলা কাজ থাকলে আরেক বেলা কাজ পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় সংসারের হাল ধরেছিল ছেলেটি।

তিনি বলেন, জুলাই মাসে আন্দোলনের শুরু থেকেই বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে চলে যেত মুজাহিদ। যোগ দিত মিছিলে। অনেক বারন করা সত্ত্বেও ফেরানো যেত না তাকে। ৫ তারিখ সকালে প্রতিদিনের মতো মুজাহিদ বাসার পাশে তার কর্মস্থল ফার্নিচারের দোকানে গিয়ে দোকান বন্ধ দেখতে পেয়ে বাসায় ফিরে আসে।

দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে ফের বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে একটি পপকর্ন কিনে তা প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের খাওয়ায়। এর কিছুক্ষণ পরই আন্দোলনে চলে যায় মুজাহিদ।

দুপুর ১টার দিকে ওর এক বন্ধুর কাছে শুনতে পাই মুজাহিদ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নিউমার্কেটের নতুন ওভার ব্রিজের কাছে গুলি খেয়েছে। আমি তখন দ্রুত ছুটে যাই সেখানে। গিয়ে দেখতে পাই মুজাহিদ গলার পেছন দিকে গুলি খেয়েছে। গুলি গলা ভেদ করে সামনের দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

ওকে ধরাধরি করে স্থানীয়রা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। তখন মুজাহিদের সাথে আমিও হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মুজাহিদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। পরে ওর মৃতদেহ আমাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে নিয়ে দাফন করি।

সাহাবু্িদ্দন মল্লিক বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই ছিল আমার ছেলে মুজাহিদ। ওর মৃত্যুতে আমাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন কীভাবে চলবো, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ভবিষ্যৎই বা কীভাবে কাটবে আমাদের?

তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে নগদ ১লাখ টাকা এবং আল-মুসলিম গ্রুপের পক্ষ থেকে নগদ ৫০হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা। এছাড়া আর কোন আর্থিক কিংবা অন্য কোনো ধরনের সহায়তা পাননি তিনি। নিজেদের ভবিষ্যৎ আর পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

শহীদ মুজাহিদের নানী সাহিদা বেগম মুঠোফোনে বাসসকে বলেন, আমার নাতি মুজাহিদকে আমার কাছে রেখেই লেখাপড়া করিয়েছি। ও অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। এলাকার সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল ওর। ছোট বেলা থেকেই ওর স্বভাব চরিত্র ভালো ছিল। আমাদের কাছে ও অনেক আদরেই ছিল।

২০২০ সালে ওর বাবার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে মুজাহিদ ওর বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়। ওকে হারিয়ে আমরা সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি। কোনোভাবেই মানতে পারছি না যে ও আর নেই।

মুজাহিদের নানা জাহাঙ্গীর মোল্লা মুঠোফোনে বাসসকে জানান, ছোটবেলা থেকেই মুজাহিদ আমাদের কাছে থেকে বড় হয়েছে। বাবা-মায়ের অভাব-অনটনের সংসার দেখে আমরাই ওকে আমাদের কাছে এনে রাখি। স্কুলে ভর্তি করে দেই। ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মুজাহিদ। কোনোদিন কোনো অভাব বুঝতে দেইনি ওকে। ওকে অনেক আদর করেই আমরা বড় করেছি। পরে মুজাহিদ করোনার সময় ওর বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়।

এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, মুজাহিদের বাবা বেকার, ওর মা’ও বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। ওদের ভবিষ্যতের জন্য যেন একটা ব্যবস্থা করে দেয় সরকার।

মুজাহিদের মা সারমিন বেগম বাসসকে জানান, মুজাহিদ ছিল অত্যন্ত দায়িত্ববান একটি ছেলে। পরিবারের বড় ছেলে ছিল ও। বাবার কাজ নাই দেখে নিজের পড়াশোনা বাদ দিয়ে অভাব-অনটনের সংসারে পরিবারের হাল ধরতে কাঠ মিস্ত্রি হিসেবে কাজে যোগ দেয় মুজাহিদ। ওর আয়ের ওপরই আমরা সবাই চলছিলাম।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আমরা এখন পাগলপ্রায়। এখন কীভাবে আমাদের চলবে, আমরা কী করব। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমি নিজেই অসুস্থ। প্রতি সপ্তাহে আমার ১হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ছেলেকে হারিয়ে সব মিলিয়ে আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।

ছেলে হত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে সারমিন বেগম বলেন, মুজাহিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার বুকের ধন মুজাহিদকে যায়া হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই আমি। তবেই আমাদের শান্তি হবে।

দেশে বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ হলেই শান্তি পাবে মুজাহিদদের আত্মা, বৃথা যাবে না তাদের আত্মত্যাগ- এমনটাই মনে করছেন সকলে। সুত্রঃ বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর