তৈয়বুর রহমান: সুনামগঞ্জের তরুণ রক্ত সংগ্রহকারী যিনি মানবতার সেবায় নিবেদিত

তৈয়বুর রহমান সুনামগঞ্জ জেলার একজন উদ্যমী তরুণ, যিনি রক্ত সংগ্রহের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষা করে চলেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত ১৬২৮ জনেরও বেশি মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন, যা তার মানবিক চিন্তাধারা এবং সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
তৈয়বুর রহমানের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, যখন তিনি এক আত্মীয়ের জন্য রক্তের সংকটে পড়েন। সেই অভিজ্ঞতা তাকে নাড়া দেয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর কেউ যেন রক্তের জন্য হাহাকার না করে। তিনি বলেন, “একটা ফোন কল, একটা জীবনের সমান। যদি আমার চেষ্টায় কেউ বাঁচে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।”
তৈয়বুর বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ, ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে রক্তদাতা ও রোগীর পরিবারের মাঝে সেতুবন্ধন গড়ে তুলেছেন। বিশেষ করে মধ্যরাত বা দূর-দূরান্তে রক্তের প্রয়োজন হলে তিনিই প্রথম এগিয়ে আসেন।
জেবাদুর রহমানের ছেলে মো: তৈয়বুর রহমান লক্ষনশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি মানব সেবায় কাজ করছেন তিনি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় চিকিৎসকরাও তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, “রক্তের সংকট আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ, তৈয়বুরের মতো স্বেচ্ছাসেবীরা এ ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন।”
তৈয়বুর রহমান আশা করেন, দেশের প্রতিটি যুবক অন্তত একবার রক্ত দান করবেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করবেন এই মহৎ উদ্যোগে অংশ নিতে।
তৈয়বুর রহমান জানান,
মূমুর্ষু ও প্রসূতি রোগীদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে বিগত পাঁচ বছরে ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ সংগঠনটি মোট ২৫৬৭ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে দিতে সক্ষম হয়।এছাড়াও রক্তদানে উৎসাহিত করতে গত পাঁচ বছরে ১০টি ফ্রী ব্লাডগ্রুপিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৩২২৬ জনের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেয়া হয়।২০২৪ সালে মোট চাহিদার ১৪৩৭ ব্যাগের মধ্যে ১৩০২ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্টাতা হুমায়ুন ফারুক আলমগীর, সহ প্রতিষ্টাতা কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ২০২৪ সালে রক্ত সরবরাহে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে এডমিন তৈয়বুর রহমান। সরবরাহকৃত মোট রক্তের মধ্যে ৯৫০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ হয় তার হাত ধরে।এছাড়াও ২০২৫ সালে গত চার মাসে চাহিদাকৃত ৫১৬ ব্যাগের মধ্যে ৪৬০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়।যার মধ্যে এডমিন তৈয়বুর রহমান কর্তৃক সরবরাহের সংখ্যা ৩৬৯ ব্যাগ।
এছাড়াও সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০২২ সালে সিলেট সুনামগঞ্জের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় জেলার বিশ্বম্ভরপুরে ৪টি ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পেইনসহ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং একটি মানবতার দেয়াল স্থাপন করা হয়।২০২৪ সালে ফেনী ও মৌলভীবাজারে আকস্মিক বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রম ও ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।