শেরপুর জেলা জজ আদালতের অঘোষিত শাসক: প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রউফের দুর্নীতির জাল

শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রউফ (৫০)–নামটি আদালতের ভেতরে এক নীরব আতঙ্কের নাম। আপাদমস্তক ভদ্রবেশে ঢাকা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠছে ঘুষ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগে। আদালতের ভেতরেই একপ্রকার ‘ছায়াশাসন’ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন তিনি—যেখানে তিনি নিজেই নিয়ম, কর্তৃত্ব আর সুবিধার নিয়ন্ত্রক বলে জনমনে অভিযোগ রয়েছে।
আব্দুর রউফ দীর্ঘদিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকেই শুরু তার ‘বিশেষ সুবিধা’ দেয়ার বদলে টাকা নেয়ার খ্যাতি। আদালতের একাধিক আইনজীবী সহকারী অভিযোগ করে বলেন, “যারা টাকা দিত, তাদের কাজ ঘণ্টায় হয়ে যেত। আর যারা দিত না, তাদের কাগজ ফাইলে ঠাঁই পেত নাবলে অভিযোগ রয়েছে ।”
তাঁর পরিবার, বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনও মনে করে, তিনি একজন বিচারক। এই ভুল ধারণাকে অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি নিজেই আগ্রহী। কারণ এতে করে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে তাঁর প্রতি একধরনের ‘ভয়ভীতি মিশ্রিত শ্রদ্ধা’ তৈরি হয়, যা তিনি কাজে লাগান প্রভাব খাটানোর জন্য।
বর্তমানে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক পদে আসীন। এই পদ থেকেই তিনি আরও বলিষ্ঠভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তার ‘ঘুষনীতি’। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অধীনস্থ কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন, তারা যেন আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বা ক্লায়েন্টদের অনেক ভূক্তভোগীর কাছ থেকে ঘুষ আদায় করে তার কাছে পৌঁছে দেয়। এ কাজে যাঁরা অনিচ্ছুক, বিশেষ করে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা, তাঁদেরকে নানা অজুহাতে আদালত থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন রউফ।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারী বলেন, “তিনি এমনভাবে জজ সাহেবকে ম্যানেজ করে ফেলেন, যেন আমরা দোষী, আর তিনি নির্দোষ। যার ফলে বিচারকের চোখে আমরা বদনামি হয়ে যাই এবং চাকরি থেকে ছাঁটাই পর্যন্ত হতে হয় বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, জেলা ও দায়রা জজ জনাব কবির সাহেবের সঙ্গে তার ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আব্দুর রউফ মামলার পক্ষপাতদুষ্ট তদবীর চালান। অভিযোগ রয়েছে, বিচারককে ভুল তথ্য দিয়ে, কিংবা আস্থাভাজন হিসেবে ব্যবহার করে, তিনি বিচারিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রউফ এসব তদবীরের পেছনে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন বলে জানা গেছে। জজ সাহেব তা জানেন না।
এই দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা। যারা অর্থ দিতে পারেন না, কিংবা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আপস করতে চান না, তারা বারবার অবহেলার শিকার হন। এক ধরনের ‘অঘোষিত সিলেকশন’ তৈরি হয়েছে—কার ফাইল উঠবে, কে আদেশ পাবে, আর কার মামলাটি বছরের পর বছর পড়ে থাকবে,মামলার ভূক্তভূগীরা জানান।
তার প্রভাব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কর্মচারী থেকে শুরু করে সিনিয়র আইনজীবী, এমনকি বিচারকেরাও তার প্রভাবকে এড়িয়ে চলেন। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে, সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কৌশল রউফ বের করে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শেরপুর জেলা জজ আদালত এখন একটি ন্যায়বিচারকেন্দ্র নয়, বরং রউফের ছায়া-সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। যেখানে নীতি, ন্যায় আর নৈতিকতা—সবকিছুই গুটিয়ে নিয়েছে একটি ক্ষমতালোভী কর্মকর্তার খেয়ালে রয়েছে বলে জানা যায়।
জনগণের আস্থা, বিচার বিভাগের মর্যাদা, ভূক্ওতভোগী মনে করেন রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অবিলম্বে এই প্রশাসনিক কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। নইলে এই ছায়াশাসন এক সময় পুরো আদালত ব্যবস্থাকে গ্রাস
করে ফেলবে।
এ বিষয়ে জনাব রউফ সাহেবের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি, এমনকি মুঠোফোনে বারবার কল করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।