শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহেও হামলা: নারীসহ আহত – ৯ মোটেরপাড় ব্রিজের অবস্থা সংকটজনক পিরোজপুরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত ৯৬ লিটার বাংলা মদসহ ৭জন গ্রেফতার মুরাদনগরে খোলা সয়াবিন তেল বোতলজাত করে বিক্রি: এক ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকা জরিমানা মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে আর্থিক অনুদান সন্দ্বীপে গুপ্তছড়া সড়কে উচ্ছেদ অভিযানের পর নতুন সংকট: ২/৩ ফুট জায়গায় দেয়াল তুলছে মালিকপক্ষ, সংঘাতের আশঙ্কা। গাইবান্ধায় মাজারে মাদকসেবীদের আখড়া বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশি এনআইডি সংশোধনের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ ইসির 

বাবাকে নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য তাহসান পত্নী রোজার

অনলাইন ডেক্স
প্রকাশিত হয়েছে : রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫
বাবাকে নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য তাহসান পত্নী রোজার । সংগৃহীত ছবি

বছরের শুরুতেই ভক্ত-অনুরাগীদের চমকে দিয়েছেন সংগীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসান রহমান খান। কোনও ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই বিয়ে করেছেন মেকওভার আর্টিস্ট রোজা আহমেদকে।

নববধূ রোজা আহমেদের পরিচয় জানতে গতকাল (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই মুখিয়ে ছিলেন অনেকেই। এরই মধ্যে খবর ছড়ায়, বরিশালের এক সময়ের যুবলীগ নেতা ফারুক আহাম্মদ ওরফে ‘পানামা ফারুক’ রোজার বাবা। ২০১৪ সালে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি।

বিষয়টির সত্যতা নিয়ে এখনও কেউ মুখ খোলেননি। তবে বাবা ও ক্যারিয়ার নিয়ে রোজার করা একটি ফেসবুক পোস্ট সামনে এসেছে।

রোজা ও তাহসান। ছবি: রোজা/ফেসবুক

রোজা। ছবি: রোজা/ফেসবুক

যেখানে উঠে এসেছে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন সব কথা। গত বছরের জুন মাসের ৪ তারিখে লেখা সেই পোস্টটির শুরুটা এমন‘আলহামদুলিল্লাহ! এইমাত্র নিউইয়র্ক সিটিতে আমার রোজা’স ব্রাইডাল মেকওভার অ্যান্ড বিউটি কেয়ার সেলুনের ডেকারশন এবং সেটআপের কাজ শেষ হলো। সেলফিটা একটু আগেই তুলেছি। সাধারণত আমার অনেক ছবি তোলা হয় কিন্তু আজ এই সেলফিটা তোলার সময় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। কিন্তু কি মনে করে কাঁদছি বা কেন কাঁদছি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান, তাই সবচেয়ে আদরের ছিলাম।’

বাবাকে নিয়ে লেখেন, ‘‘বাবা আমাকে সব সময় বলতেন, ‘আমার ছোট্ট পরীটা কই রে’। সেই সময় বরিশাল শহরে আমাদের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। ছোট বেলায় কখনো কমতি পাইনি। এর বাসায় দাওয়াত, তার বাসায় দাওয়াত! আর যেতেই হবে কারণ আমাদের ছাড়া দাওয়াত অসম্পূর্ণ হবে। এমন দিন গিয়েছে, দিনে ৪ টা দাওয়াতেও অংশ নিয়েছি। শুধু দেখা করে আসার জন্য।  হঠাৎ বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ওপারে। যতদিনের হায়াত তিনি নিয়ে এসেছেন ততদিন ছিলেন আমাদের সাথে। অভিযোগ তো অনেক জমা আছে, বাবার সেই ছোট্ট পরীটার কিন্তু অভিযোগ কার কাছে করব? আর বাবা শুধু আমাদের ছেড়ে চলে যায়নি, সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাদের এতো সম্মান করতেন তাদের ভালোবাসাও চলে গেল আমাদের ওপর থেকে। আর সেই দিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, যে ভালোবাসা আমরা পেয়েছি তা সবই বাবাকে ঘিরে আর সাথে অনেক অনেক স্বার্থ। বাবা চলে যাবার ঠিক ২ মাসের মাথায় আমার এক রিলেটিভের বিয়ে। আমরা অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম একে ওপরের, কিন্তু বিয়েতে দাওয়াত পেলাম না। যে রিলেটিভরা সেই বিয়েতে অংশ নিয়েছে সবাই ফোন করতে শুরু করল মাকে। কেন আমরা গেলাম না, কোথায় আমরা? বরিশালে আছি কিনা এই সেই। সেদিন সারারাত বসে দেখেছি মায়ের সেই সরল মনের কান্না।’’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রোজা আরও লেখেন, ‘আপনারা লেখাটা পড়ে ভাবতে পারেন, দাওয়াত পাইনি বলে কাঁদছি? কিন্তু দাওয়াতের জন্য নয়, একি দালানে সবাই আনন্দ করছে, আমি, মা আর ছোট ভাই উৎস তখন বাসার এক কোণে। খুব চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, বাবা তুমি একটু দেখে যাও, যাদের জন্য এতো করেছ তারা আমাদের সব ফিরিয়ে দিচ্ছে। বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছেন, দাদা ভাইয়ের অনেক আছে কিন্তু কিছুই গুছানো না। কে বুঝেছেন যে এতো অকালে উনি চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে! আর দাদার সব সম্পত্তিতেই চাচা-ফুফুদের ভাগ আছে। মায়ের খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। আর আমি চলে আসি তাদের কোলে। আমার মা খুব সরল মনের, দিন দুনিয়ার কিছুই বুঝে না।  সে যে নিজের ভয়েস রেইস করবে বা তার সেটা রেইস করার অধিকার আছে সেটা তার ধারনার বাহিরে। কখনো তার সেই সাহসটাই ছিল না যে শ্বশুরকে বলবে, বাবা আমাদের সম্পত্তিটুকু আমাদের বুঝিয়ে দেন। আর উৎস তো তখন অনেক ছোট। আমরা দুই ভাই-বোন তখন পিচ্চি পিচ্চি। আমাদের পড়াশোনার খরচ তখন একদম হিসাব করে টায় টায় দেয়া হতো মায়ের হাতে। তাই কিছু খেতে ইচ্ছে করলে বলতাম না যাতে উৎস যেটা চায় সেটা সে পায়। আমার দিক থেকে একটু কম হলেও সমস্যা নেই।’

রোজা ও তাহসান। ছবি: রোজা/ফেসবুক

রোজা ও তাহসান। ছবি: রোজা/ফেসবুক

সেসময় বেশ কিছু সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার মুখোমুখি হন রোজা। তার ভাষ্য, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাব আসা শুরু হয়। এই রিলেটিভ একে আনে ঐ রিলেটিভ ওকে আনে। সেই সময় আমি প্রথম ভয়েস রেইস করেছি, যে আমার বয়স কম আর বাবা মারা গেছে কী হয়েছে? বাবার আর আমার স্বপ্ন তো মারা যায়নি! ঐ দিন কথাটায় খুব মাইন্ড করেছিল আমার কাছের লোকজন। বড়দের মুখে মুখে কথা, আমি আর মানুষ হবো না। আর সেই থেকেই রটানো হয় কতো কথা। সারাদিন নাকি ছেলেদের সাথে ঘুরি, আমার বন্ধু-বান্ধব সার্কেল ভালো না, পর্দা করি না আরও কতো কি। মেয়ে তো নিশ্চয়ই প্রেম করে আর না হলে এতো ভাল প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়? আর প্রতিদিন এভাবেই বাসায় অভিযোগ আসা শুরু করে।

আমার মা এত অভিযোগ শুনতে শুনতে বলল, ‘তুই আমাকে ছুঁয়ে বল এইসব অভিযোগ কি সত্যি?’ আমি মাকে ছুঁয়ে বললাম না মা সব মিথ্যা। আমি তো স্কুল আর বাসা বাদে কোথাও যাই না। এই বলে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম মায়ের সাথে। ওইদিনের পর থেকে মা আমার সাথে নিয়মিত কোচিংয়ে যেত আবার এসে বাসার সবার জন্য রান্না করতে হতো। খুব কষ্ট হয়ে যেত তার। তখন নিজের কাছে মনে হতো আমি সবার জন্য একটা বোঝা, সবক্ষেত্রেই আমার দোষ। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ দাদাভাই অসুস্থ হয়ে পরেন, আর সেই থেকে আমার সাথে কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে মা। কারণ তাদের সেবা যত্ন করতে হতো মাকেই।

তখন থেকেই একা একা চলা শুরু করলাম। একটা ফ্রেন্ড বলল ও স্টুডেন্ট পড়ায় আমি বললাম, ‘আমাকে একটা খুঁজে দিবি? আমিও শুরু করতে চাই।’ বেশ একজন খুঁজতে গিয়ে দুজনকে পেয়ে গেলাম। কেজিতে পড়ে খুব অল্প টাকা বেতন। আর কোচিং এর পড়া আমার ভালো লাগত না তাই আমি নিজে নিজে বুঝে পড়তাম। কিন্তু বাসার কথা ছিল, কোচিংয়ে পড়তেই হবে। তাই কোচিংয়ের সময়টা আমি স্টুডেন্ট পড়াতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। আর সেই টাকা জমিয়ে উৎসকে ঘুরতে নিতাম, কিছু একটা পছন্দ করলে কিনে দিতাম। বাবার যে আদর আমি পেয়েছি ও সেই আদর পায়নি তাই বাবার আদর হয়তো দিতে পারতাম না তবে কখনো যাতে আফসোস না করে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতাম।’’

স্কুলেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। এরপর আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়েন মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুলে আমি অনেক পপুলার ছিলাম নাচের জন্য। ওহ ক্লাস থ্রিতে থাকতে নাচের জন্য আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম। আর তখন থেকেই একা একা সাজতাম আর যারা আমার সাথে নাচ করত ওদেরকেও সাজিয়ে দিতাম। আর সবাই আমার সাথে চলতে চাইত বিশেষভাবে মেয়েরা কারণ আমি খুব ভাল সাজাতে পারি। আমার এক দূরের কাজিনের বিয়ের প্লান ছিল ঢাকা থেকে আর্টিস্ট আনবে, তখন বরিশালে ফ্রিল্যানসার আর্টিস্টের নামটার সাথে কেউ পরিচিত ছিল না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেয়েটা ঢাকার আর্টিস্ট আনতে পারেনি। আমাকে কল দিয়ে খুব মন খারাপ করে বলল, ‘পরিবার বিয়েতে অনেক খরচ করছে, এত বড় আয়োজন কিন্তু মেকআপের জন্য এত টাকা দেবে না। আর বরিশালের কোনও পার্লারের সাজ আমার পছন্দ না, তোর সাজটা আমার খুব ভালো লাগে। আমি একটু চুপ থেকে বললাম, ‘আপু তোমার এত বড় বিয়ের আয়োজনে আমার কাছে সাজবা, শিউর তুমি? বলল হ্যাঁ তোর মতো করে আমাকে সাজিয়ে দিস তাহলেই হবে। সেই থেকে মেকআপের প্রফেশনাল জার্নিটা শুরু। এর পর আপুকে সাজালেও খুব ভয় হচ্ছিল আমি কি বিয়েতে যাব? কারণ কেমন না কেমন হয়েছে সাজ? মা জোর করে নিয়ে গেল। সবার এতো প্রশংসা আর ফিডব্যাক পেয়ে আমি নিজেই হতভম্ব। এরপর থেকেই আপুর অনেক ফ্রেন্ড আমার কাছে সাজা শুরু করল। মাত্র ২০০০ টাকা করে নিতাম। তবে সেই বাসার সমস্যায় আবার পড়লাম। দাদা ভাইকে বলা হলো, আমি পার্লারে কাজ করি, পার্লারের মেয়ে আমি। আমি বললাম, ‘হ্যাঁ তো? পার্লারে যারা কাজ করে ওরা কি মানুষ না?’’

তখন থেকেই মেয়েদের নিয়ে কাজ করেছেন রোজা। বলেন, ‘আমাকে যে কথা শুনতে হয়েছে আমি আর একটি মেয়েকেও সেই কথা শুনতে দিতে চাই না। তাই শুরু করলাম মেকআপ ক্লাস। এক বছরে ৫০০+ মেয়েকে মেকআপ শিখালাম। শত শত মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াল। হঠাৎ একদিন মায়ের কল, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাম্বাসিতে দাঁড়াতে হবে ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য। বড় মামা অনেক আগে থেকে আবেদন করেছিল। দেখতে দেখতে ভিসা হয়ে গেল। উৎস আর মায়ের জন্য দেশ ছাড়তে হবে। একটু একটু করে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের অবস্থান তৈরি করেছি।

নিউইয়র্কে নিজের প্রতিষ্ঠানে রোজা। ছবি: রোজা/ফেসবুক

নিউইয়র্কে নিজের প্রতিষ্ঠানে রোজা। ছবি: রোজা/ফেসবুক

নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সার্কেল আর নিজের স্বপ্ন সব ফেলে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ নিয়ে চলে আসলাম ইউএসএতে।’
শেষটা করেছেন বাবা-মায়ের কথা বলে। রোজা লেখেন, ‘আজ খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, বাবা তোমার সেই ছোট্ট পরীটা অনেক বড় হয়েছে! আমার সব স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু তুমি বাবা।’

জানা যায়, শনিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাহসান ও রোজার। এরপর দুজনের প্রোফাইল থেকেই বেশ কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছেন তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর