রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মাদারীপুরে শ্রমিকদল নেতা শাকিল মুন্সী হত্যার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কসবায় বাস-ট্রাক মুখোমুখির সংঘর্ষে নিহত -০২ রিমান্ড শেষে কারাগারে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নৌবাহিনীর জাহাজ ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে  ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ তদন্তের জন্য ডাটা এন্ট্রি চলছে : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা    ভারতের বি এস এফ এর হাতে বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু, ইছামতি নদীতে ভেসে উঠলো লাশ আওয়ামী লীগের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। বাবা হওয়ার মাত্র ২২ দিনের মাথায় শহীদ হন শান্ত শেরপুরের গজনী পর্যটন কেন্দ্রের মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান, ৭ প্রজাতির ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও অবমুক্ত। অর্থের বিনিময়ে কনস্টেবল নিয়োগের নামে প্রতারনা: বিজিবি সদস্যসহ দুই প্রতারক গ্রেফতার

বাবা হওয়ার মাত্র ২২ দিনের মাথায় শহীদ হন শান্ত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
বাবা হওয়ার মাত্র ২২ দিনের মাথায় শহীদ হন শান্ত
শহীদ সাইফুল ইসলাম শান্ত, ছবি : বাসস

বিয়ের প্রায় দুবছর পর বাবা হয়েছিলেন, আর বাবা হওয়ার ২২ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট স্বৈরশাসনের পতনের পর বিজয় মিছিলে যোগ দিয়ে শহীদ হন ২৬ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম শান্ত। 

একটি নিট পোশাক কারখানার অংশীদার শান্তকে বড় অবেলায় স্ত্রী ফাল্গুনী ইয়াসমিন ও নবজাতক সন্তান জাওয়াদকে রেখে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। 

শান্তর সন্তান মোহাম্মদ জাওয়াদ এখন পিতৃস্নেহবঞ্চিত হয়ে বড় হবে। সে দেখবে অন্য শিশুরা তাদের বাবার স্নেহ পাচ্ছে। পিতৃস্নেহের অপার্থিব ও অনির্বচনীয় অনুভূতি আজীবন অধরা থেকে যাবে তার কাছে।  

কোনো বাবাকে তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে দেখে হয়তো জাওয়াদ কল্পনা করবে- তার বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিও তাকে একইরকম ভালোবাসতেন। স্বৈরশাসনের পতনের দিন শান্ত শহীদ হওয়ায় পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছে এটি আরও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে।

শান্তর বাবা ৬২ বছর বয়সী আব্দুল মতিন এবং বড় ভাই ৩৪ বছর বয়সী হাফিজ আল ফয়সল জানান, তারা এখনও নিশ্চিত নন কেন এবং কারা শান্তকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পিটিয়ে হত্যা করল এবং ঠিক কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে।

‘বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমি আমার বাবার (শান্তর শ্বশুর) বাড়ির বারান্দায় কোলে শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন আমার স্বামী রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, সে বিজয় মিছিলে যাবে,’ বলেন শান্তর স্ত্রী ফাল্গুনী ইয়াসমিন। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

দীর্ঘ বিরতির পর তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে করুণ কণ্ঠে বলেন, ‘সে (শান্ত) আমাদের সন্তানকে কোলে আমার কাছে শেষবার দেখেছিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে।’

ফাল্গুনী জানান, শান্ত বলেছিলেন যে বিজয় মিছিল শেষে শ্বশুর বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু ‘সে আর ফিরে আসেনি।’ বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কেউ একজন তাকে জানায়, শান্তকে হত্যা করা হয়েছে।

‘আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। সে আর কখনো ফিরবে না। আমি জানি না আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ কী? সে কিছু বোঝার আগেই বাবাকে হারাল,’ বিলাপের সুরে বলেন ইয়াসমিন।

‘আমার স্বামীর কী দোষ ছিল? কেন তাকে হত্যা করা হলো? কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করেন ইয়াসমিন। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

মতিন এবং ৪৭ বছর বয়সী নিলুফার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে শান্ত ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাই ফয়সল গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারে একটি দোকানে কাজ করেন এবং বোন ফাতেমা বেগম বিবাহিত, অন্যত্র বসবাস করেন।

শান্তের পরিবার একটি যৌথ পরিবার। যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগ এলাকায় তার বাবা-মা, দুই ভাই, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একসাথে বসবাস করেন।

‘পিতার জন্য সবচেয়ে ভারী জিনিস তার সন্তানের কফিন,’ মতিন তার বেদনা প্রকাশ করে বলেন।

ফয়সল স্মরণ করেন, হাজার হাজার মানুষ যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন উদযাপন করতে শাহবাগে যাচ্ছিল, তখন তার স্ত্রীও সেখানে যেতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু তারা কেবল ঢোলাইপার পর্যন্ত গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরবেন। তখনই তারা দেখেন শান্ত বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিজয় মিছিলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্তর এক বন্ধু ফোন করে ধোলাইপাড়ে যেতে বলেন।

বন্ধুটি জানান, শান্তকে কিছু লোক মারাত্মকভাবে মারধর করেছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ফয়সল জানতে পারেন, শান্তকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

‘তখন শহরের রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণের কারণে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমি কোনোভাবে একটা রিকশা জোগাড় করে ঢামেক হাসপাতালে যাই, সেখানে শান্তর বন্ধুদের আগ থেকে উপস্থিত থাকতে দেখতে পাই।’

‘আমি তাদের জিজ্ঞেস করি আমার ভাইয়ের অবস্থা কেমন, তারা বলে, সে আর বেঁচে নেই।’

এই কথা শুনে তিনি হতবিহ্বল হয়ে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ধাক্কা সামলে দেখেন শান্তর নিথর দেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে মেঝেতে পড়ে আছে।

‘আমরা তাকে কখনো দুঃখ কী জিনিস বুঝতে দেইনি,’ বলেন ফয়সল।

তিনি বলেন, ‘আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিই ভাইয়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাব। তখন হাসপাতালে কিছুই কাজ করছিল না, এমনকি মেডিকেল কাগজপত্রের কথাও মনে আসেনি।

মাগরিবের নামাজের পর শান্তর নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছায়। সেই রাতেই তাকে মীর হাজীরবাগ বড়বাড়ী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সুত্রঃ বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরও খবর দেখুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর